মোবাইল চালু রেখেই হোক রোহিঙ্গা নজরদারি

শরণার্থী রোহিঙ্গারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন কি পারবেন না- এই বিষয়টা মাঝে মাঝেই আসছে দমকা হাওয়া নিয়ে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর লাখ দশেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে। তারপর থেকে থেকে বেশ কয়েকবার এসেছে এই ইস্যুটা। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশের পরে এই দফায় আবারো কড়াকড়ি আসলো তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর।
sim
কক্সবাজারের উখিয়ার একটি দোকান থেকে সিম কেনার পর নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কথা বলছেন একজন রোহিঙ্গা। ছবি: আমরান হোসেন/স্টার

শরণার্থী রোহিঙ্গারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন কি পারবেন না- এই বিষয়টা মাঝে মাঝেই আসছে দমকা হাওয়া নিয়ে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর লাখ দশেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে। তারপর থেকে থেকে বেশ কয়েকবার এসেছে এই ইস্যুটা। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশের পরে এই দফায় আবারো কড়াকড়ি আসলো তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন যে বিধি-বিধান আছে, তাতে রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইল সিম যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু নানা কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে তাদের হাতে চলে যাচ্ছে এই সিম। অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে এমন কেউ সিমটি তুলে বেশী দামে রোহিঙ্গাদের দিতে পারেন। আবার রোহিঙ্গারা যে সহজেই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন, সেটি ব্যবহার করেও বাজার থেকে সিম নিয়ে নিতে পারেন। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ২০টি পর্যন্ত সিম কেনার সুযোগ তো আছেই।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটর বা তাদের রিটেইলার-ডিস্ট্রিবিউটদের কারসাজিতেও রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইল সিম গিয়ে থাকতে পারে। বছর তিনেক আগে হওয়া মোবাইল সিমের বায়োমেট্টিক রি-রেজিস্ট্রেশনের সময় অনেক গ্রাহকের একাধিকবার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়েছে। আর তার মাধ্যমে অসংখ্য সিমের নিবন্ধনও হয়েছে, যেগুলো এখন বাজারে আসছে এবং যা রোহিঙ্গাদের হাতেও যাচ্ছে। ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যায় প্রি-অ্যাক্টিভেটেড ওই সব সিম।

এসব প্রেক্ষিতে সরকারের দিক থেকে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো- উখিয়া আর টেকনাফে সিম বিক্রি বন্ধ। প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত থ্রিজি এবং ফোরজি সেবা বন্ধ। মিয়ানমার সীমান্তে মোবাইল ফোন অপারেটরদের টাওয়ারগুলোতে ক্ষমতা কমিয়ে রাখতে হবে। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে যতো সিম ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোর নিবন্ধন পরিচয় যাচাই করে দেখা হবে।

চতুর্থ বিষয়টি করা হবে পুরোপুরি প্রযুক্তির মাধ্যমে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করেই হবে কাজটি।

আমার পয়েন্টটা এখানেই। ঢাকায় অফিসে বসে মোবাইল অপারেটরদের নেওটয়ার্ক পর্যালোচনা করেই কিন্তু বের করা সম্ভব নির্দিষ্ট করে সিমটি কে ব্যবহার করছেন? ঠিক কোথায় ব্যবহার হচ্ছে? কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? কী কথা বলছেন? সিমটি দিয়ে আর কী কী কাজ হচ্ছে- অর্থাৎ এমএফএস অ্যাকাউন্ট আছে কী না বা টাকার লেনদেন হচ্ছে কী না? হলে কার কার সঙ্গে এবং কতো লেনদেন হয়েছে? যে মোবাইল ফোনে সিমটি আছে সেখানে আর কোনো সিম আছে বা ছিলো কী না? সিমটি নিয়ে কোথায় কোথায় যাওয়া হচ্ছে, কার কার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, এক সঙ্গে জড়ো হচ্ছে কী না? ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে রোহিঙ্গারা অন্য কোনো শহরে যাচ্ছে কী না? যে মোবাইল ফোনে সিমটি ব্যবহার হচ্ছে সেটি বৈধ পথে আমদানি করা কী না? যে সিমটির ব্যবহার হচ্ছে সেটি কোনো ডিস্ট্রিবিউটর বা রিটেইলারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে?

বলার কি আর অপেক্ষা রাখে যে- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিললেই রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তবে রোহিঙ্গাদেরকে মোবাইল সিম ব্যবহার করতে দিলে এর বাইরেও আরও অসংখ্য তথ্য পাওয়া যাবে, যেটি আমারও পুরোপুরি জানা নেই।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঠিক যেভাবে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে করে অপরাধী ধরে ফেলছে, তেমনি একই কায়দায় এখানে কাজ করতে হবে। যে অপরাধ করবে সে ধরা খাবে। আর যে অপরাধপ্রবণ নয়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সুবিধা পাবে।

ওটাও ঠিক যখন রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে সিম দেওয়া হবে তখন অপরাধপ্রবণ যারা, তারা আরও সচেতনভাবে মোবাইল ব্যবহার করবে। কিন্তু এটাও তো ঠিক, সঙ্গে একটি মোবাইল থাকলেই কিন্তু অপরাধী তার অজ্ঞাতেই অনেক তথ্যের জন্ম দেবে এবং নানা প্রমাণ সে রেখে যাবে।

এখন এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় যে, আমরা রোহিঙ্গাদেরকে মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে অফিসে বসেই তাদেরকে তদারকি করবো, নাকি তাদের পেছনে পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের মাঠে-ঘাটে ছুটে বেড়াতে পাঠাবো?

মোবাইল বন্ধ করে দেশীয় একটি বিশেষ অংশকেও কিন্তু বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এই যেমন- এখনও আইনগতভাবে রোহিঙ্গারা মোবাইল সিম পেতে পারেন না, কিন্তু তাতে তাদের হাতে সিম যাওয়া বন্ধ হয়নি।

বলা হচ্ছে, তাদের হাতে এখন আট থেকে নয় লাখ সিম আছে। কারও কারও হাতে একাধিক সিমও আছে- কখন কোনটাতে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় সেই বিবেচনায়।

উপরে প্রশ্নগুলো করেছি- সেগুলোর উত্তর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পাওয়া যাবে যদি রোহিঙ্গাদেরকে সঠিকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে, তবেই সিম দেওয়া হয়।

এখানে একটি তথ্য হলো, যেসব রোহিঙ্গা গত দুই বছরে এসেছেন, তাদের কিন্তু নিবন্ধন হয়েছে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেই সেই নিবন্ধন হয়েছে। এখানে সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয় যে- ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া এবং ছবি তোলার মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন করেছে পাসপোর্ট বিভাগ।

এর বাইরেও কিন্তু তালিকা হয়েছে। আরও হচ্ছে শুনেছি। শুনেছি একটি সংস্থাকে দিয়ে আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ, ছবিসহ আবারও ডাটাবেজ করা হচ্ছে। তো ভালো কথা, সেই ডাটাবেজ দিয়েই রোহিঙ্গাদেরকে মোবাইল সিম দেওয়া যেতে পারে। আর সেটি হলে পুরোপুরি নজরদারিতে থাকবে তারা। প্রযুক্তিই আমাদেরকে এই সুবিধা দিয়েছে। কেনো আমরা সেটি নিতে কার্পণ্য করছি?

মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম: সিনিয়র রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago