সাকিবের ব্যাটে আফগানিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ

Shakib Al Hasan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ত্রিদেশীয় সিরিজে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৯ ওভারে ১৩৯/৬ (আফগানিস্তান ১৩৮/৭)

সাকিবের ব্যাটে জিতল বাংলাদেশ। 

এক পাশে পড়ছিল উইকেট, বাড়ছিল রান নেওয়ার তাড়া। সাকিব আল হাসান সব সামলে দলকে দিলেন দিশা। তার দারুণ ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের কাছে হারের বৃত্ত ভাঙল বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আগে ফাইনালের প্রতিপক্ষকে এক ওভার হাতে রেখে ৪ উইকেটে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসও চাঙা রাখল সাকিব আল হাসানের দল।

দলকে জেতাতে ৪৫ বলে ৮ চার আর ১ ছক্কায় ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৮/৭ (রহমানুল্লাহ ২৯, হজরতুল্লাহ ৪৭, আস্ফর ০, নজিবুল্লাহ ১৪, নবি ৪, গুলবাদিন ১, শফিকুল্লাহ ২৩*, করিম ৩, রশিদ ১১*; সাইফউদ্দিন ১/২৩, শফিউল ১/২৩, শাকিব ১/২৪, মাহমুদউল্লাহ ০/১৬, মোস্তাফিজ ১/৩১, মোসাদ্দেক ০/১০, আফিফ ২/৯)।

বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১৩৯/৬ (লিটন ৪, শান্ত ৫, সাকিব ৭০*, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১, আফিফ ২, মোসাদ্দেক ১৯; মুজিব ১/১৯, নাভিন ২/২০, করিম ১/৩১, গুলবাদিন ০/১৬, নবি ০/২৪, রশিদ ২/২৭)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।

রশিদের এক ওভারে ১৮ নিলেন সাকিব-মোসাদ্দেক

রশিদ খানের করা ১৮তম ওভার থেকে ১ ছক্কা আর ৩ চারে ১৮ রান নিয়েছেন সাকিব ও মোসাদ্দেক। ম্যাচ জিততে শেষ দুই ওভারে কেবল ৯ রান চাই বাংলাদেশের। 

রশিদে কুপোকাত আফিফ 

রশিদ খানকে সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গোলমাল। বোল্ড হয়ে ফিরেছেন আফিফ হোসেন। ১০৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ

সাকিবের ফিফটিতে বাংলাদেশের আশা 

দলের বাকিসব ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝে প্রতিরোধ গড়ে দারুণ ফিফটি তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৩৪ বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক স্পর্শ করেছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি।

তড়িঘড়ি ফেরত গেলেন সাব্বির 

আগের ম্যাচে একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন সাব্বির রহমান। সেই জায়গা পাকা করার মতো কিছু করতে পারেননি আবার সুযোগ পেয়ে। ২ বলে ১ রান করে নাবীন উল হকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৯৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

রশিদ আসতেই ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ 

১৩ ওভার পেরুনোর পর বল হাতে নিলেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। বল করতে এসেই পেলেন সাফল্য। তার বলে পরিষ্কার এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরত গেছেন ৮ বলে ৬ করা মাহমুদউল্লাহ। ৯৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ফ্লাইড লাইটের সমস্যায় খেলায় বিঘ্ন

ত্রয়োদশ ওভারের সময় ফ্লাইড লাইটের সমস্যার কারণে সাময়িক বন্ধ আছে খেলা। 

জুটি জমতেই ফিরলেন মুশফিক 

ঠিক আগের ওভারেই সহজ জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটির পর থেমেছেন তিনি। করিম জানাতকে মিড উইকেট দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে শেষ হয়েছে তার ২৫ বলে ২৬ রানের ইনিংস। ৭০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

জীবন পেলেন মুশফিক

মোহাম্মদ নবির বলে ছক্কা মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। সহজ সেই সুযোগ হাতে রাখতে পারেননি বদলি ফিল্ডার নাজিব তারাকাই। ১৫ রানে জীবন পেয়েছেন মুশফিক।

Shakib Al Hasan
সাকিব-মুশফিকের জুটিতে খেলায় ফিরছে বাংলাদেশ

১২ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের। দুজনের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে ১০ ওভারে ৬২ রানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে এরমধ্যে দুজনে মিলে ৪০ বলে নিয়েছেন ৫০ রান। 

দৃষ্টিকটু শটে এবারও ফিরলেন শান্ত 

চমক হয়েই টি-টোয়েন্টি দলে এসেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারলেন না তিনি। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের অভিষিক্ত পেসার নাবীন-উল-হকের স্লোয়ার বুঝতে পারেননি। ফ্লিকের মতো শট খেলতে গিয়ে মিড উইকেট দিয়েছেন সহজ ক্যাচ। ৮ বলে ৫ রান করে শান্তর আউটে ১২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

বাজে শটে লিটনের বিদায় 

আগের ম্যাচে একটা শুরু এনেছিলেন। লিটন দাসের কাছে পাওনা ছিল একটা বড় ইনিংসের। কিন্তু ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান সে চাহিদার ধারেকাছেও গেলেন না। মুজিব-উর-রহমানকে মারতে গিয়েছিলেন। বলের লাইনে যেতে পারেননি, খেলতে পারেননি অথরিটি নিয়ে। তার বাজে শটে টপ এজ হয়ে ক্যাচ উঠে আকাশে। মিড অফে আসগর আদগানের তা লুফে নিতে কোন সমস্যাই হয়নি। ৯ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

দারুণ বোলিংয়ে সহজ লক্ষ্য পেল বাংলাদেশ 

দুই আফগান ওপেনার এনেছিলেন দুরন্ত শুরু। তাদের ব্যাটে বড় রানেরই আশা দেখছিল আফগানিস্তান। কিন্তু ওপেনিং জুটি ভাঙার পর একদম তাল হারায় তাদের ইনিংস। দারুণ বোলিং ফিল্ডিংয়ে আফগানিস্তানকে কাবু করে লক্ষ্যটা একদম নাগালের মধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের বৃত্ত ভাঙতে ২০ ওভারে ১৩৯ চাই সাকিব আল হাসানদের। 

শফিউলের বলে ফিরলেন করিম

প্রথম স্পেলে দারুণ বল করেও উইকেট পাননি শফিউল ইসলাম। তার বলে পড়েছে সহজ ক্যাচ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে উইকেট পেলেন তিনি। তার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন করিম জানাত। ১১৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান

সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড নাজিবুল্লাহ 



ভালো শুরুর পর পূঁজিটা বড় করার ভিত হারালো আফগানিস্তান। ছন্দে থাকা নাজিবুল্লাহ জাদরানও পারেননি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তাকে বোল্ড করে ছেঁটেছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ১০৯ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। 

পঞ্চম উইকেট হারালো আফগানিস্তান

পয়েন্টে ঠেলে রান নিতে গিয়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। অপরপ্রান্ত থেকে গুলবদিন নাইব সময়মত আসতে পারেননি। তার আগেই আফিফের দারুণ থ্রোতে রান আউটে কাটা পড়েছেন তিনি। ৯৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। 

নবিকে ফিরিয়ে সাকিবের উইকেট 

ভালো শুরুর পর দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল আফগানিস্তান। মোহাম্মদ নবি সেই চাপ থেকে দলকে নিতে পারতেন দারুণ জায়গায়। বিপদজনক সেই ব্যাটসম্যানকেই দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আউট করে দিয়েছেন সাকিব। সাকিবের ভেতরে ঢোকা  বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিও হয়েছেন নবি। ৬ বলে ৪ রান করে তিনি আউট হলে ৮৮ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানরা। 

গুরবাজকে ফেরালেন মোস্তাফিজ 

১ রানে শফিউল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে বেঁচেছিলেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। পরে খেলেছেন দারুণ কিছু শট। তবে মাঝারি এক ইনিংস খেলেই থেমেছেন তিনি। মোস্তাফিজের বলে ফ্লিকের মতো করতে গিয়েছিলেন। টপ এজ যায় মোস্তাফিজেরই হাতে। ২৭ বলে ২৯ রান করে থামেন তিনি। ৮০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানরা। 

আফগানিস্তানের ঝড়ো শুরুর পর আফিফের জোড়া আঘাত 

জাজাইকে ফেরানোর পর আসফর আফগানকেও তুলে নিয়েছেন আফিফ। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়েছিলেন আসগর। পুরো টাইমিং না  হওয়ায় ক্যাচ যায় লং অনে। ৭৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। সিরিজে প্রথমবার বল করতে এসেই ডাবল উইকেট মেডেন পেয়েছেন আফিফ। 

ওপেনারদের ঝড়ো শুরুর পর আফিফের উইকেট 

শুরুতে দুই পেসারের ভালো বোলিংয়ে ছিলেন জড়সড়ো। আফগানিস্তানের দুই ওপেনার শফিউল ইসলাম ও হযরতুল্লাহ জাজাই ক্রমেই মেলতে শুরু করেছেন ডানা। ঝড় তুলে রান বাড়াচ্ছেন তরতরিয়ে। তাদের থামাতে সিরিজে প্রথমবার আফিফ হোসেনের হাতে বল তুলে দেন সাকিব আল হাসান। তাতেই কাজ হয়। দশম ওভারে নিজের তৃতীয় বলেই সাফল্য আনেন আফিফ। ৩৫ বলে ৪৭ করে হযরতুল্লাহ জাজাই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে। 

পেসারদের চাপ সামলে আফগানিস্তানের ভালো শুরু 

দারুণ বল করে শুরুতেই আফগানিস্তানকে চেপে ধরেছিলেন দুই পেসার। বিশেষ করে শফিউল ইসলাম সুযোগ তৈরি করেছিলেন উইকেটের। মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ ছাড়লে আসেনি উইকেট, বিরুপ পরিস্থিতি সামলে খেলায় ফিরেছে আফগানরা। পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান তুলেছে তারা। 

গুরবাজকে জীবন দিলেন মাহমুদউল্লাহ

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শফিউল ইসলামের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। সহজ সে ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ১ রানে জীবন পান আফগান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। 

Shakib Al Hasan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে নেই আমিনুল

ফাইনালের ড্রেস রিহার্সালের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানান, উইকেটে থাকা ঘাসের সুবিধা কাজে লাগাতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছেন তারা। টুর্নামেন্টের বিচারে গুরুত্বহীন এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে পায়নি আগের ম্যাচের অভিষেকে দারুণ করা লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলামকে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে ১৮ রানে ২ উইকেট আলোচনায় এসেছিলেন চমক হয়ে দলে আসা আমিনুল। সে ম্যাচেই হাতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। সতর্কতামূলক হিসেবে আপাত গুরুত্বহীন এই ম্যাচে তাকে নামানো হয়নি। আমিনুল না থাকায় একাদশে ফিরেছেন সাব্বির রহমান।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে দুটো পরিবর্তন এনেছে আফগানিস্তান। দৌলত জাদরানের জায়গায় এক ম্যাচ পর ফিরেছেন করিম জানাত। 

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন  শাফিউল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।

আফগানিস্তান একাদশ: হযরতুল্লাহ জাজাই, রহমাতুল্লাহ গুরবাজ, শফিকুল্লাহ, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবি, নাজিবুল্লাহ জাদরান, গুলবদিন নাইব, রশিদ খান, করিম জানাত, নাবীন-উল-হক, মুজিব-উর-রহমান। 

ফাইনালের আগে বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ম্যাচ

দু’দল আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। টুর্নামেন্টের বিচারে ম্যাচটা তাই নেহায়েতই আনুষ্ঠানিকতা। তবে বাংলাদেশ ম্যাচটাকে দেখছে আফগানিস্তানের কাছে টানা হারের বৃত্ত থেকে বেরুনোর মিশন হিসেবে। টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে একবারই হারাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে জেতার পর রশিদ খানদের বিপক্ষে হেরেই চলেছেন সাকিব আল হাসানরা। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচেও আফগানদের সঙ্গে একদম পেরে উঠা যায়নি। জিম্বাবুয়েকে দুই ম্যাচে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত হলেও ফাইনালের আগে বিশ্বাস ফিরে পেতে জয়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের।

Comments