স্বর্ণালি যুগের নায়ক ফারুকের নায়িকারা

ফারুক-কবরী

বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন-নায়ক ফারুক তাদের একজন। সুজন সখী, গোলাপী এখন ট্রেনে, সারেং বউ, লাঠিয়াল, নয়নমণি, মিয়াভাই, আলোর মিছিল-অসংখ্য আলোচিত সিনেমার নায়ক ফারুক। তার নায়ক জীবনে এদেশের শীর্ষ সব নায়িকারা অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং আজীবন সম্মাননা। অভিনেতা ছাড়া একজন সংসদ সদস্যও তিনি। নায়কজীবনের সেইসব নায়িকাদের নিয়ে ফারুক কথা বলেছেন ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

ফারুক অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম জলছবি। নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলেন কবরীকে। এরপর কবরীর সঙ্গে জুটি হিসেবে অভিনয় করেন সারেং বউ সিনেমায়। ফারুক বলেন, সারেং বউ সিনেমার শেষ শুটিংয়ের দিন আমার ১০৫ ডিগ্রি জ্বর ছিল। শুটিং করার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু কবরী সেদিন শুটিং শেষ করবেনই এবং কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরে আসবেন। আমি মন খারাপ করে জ্বর নিয়ে পড়েছিলাম। পরে ওই জ্বর নিয়ে শুটিং করি। কিন্তু আমি সেদিন কষ্ট পেয়েছিলাম।

কবরীর সঙ্গে ফারুক আরও অভিনয় করেন সুজন সখী সিনেমায়। এই সিনেমাটি টানা একবছর দেশের নানা প্রেক্ষাগৃহে চলেছে সে সময়ে। স্মৃতি খুঁজে ফিরে বললেন ফারুক। আরও বলেন, সুজন সখী করার পর অনেকদিন আমাদেরকে মানুষজন সুজন ও সখী বলে ডেকেছেন।

নায়িকা কবরী সম্পর্কে নায়ক ফারুক বলেন, নিঃসন্দেহে কবরী ভালো অভিনেত্রী। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে কবরীর মুখ ও শরীর পর্যন্ত অভিনয় করত। অভিনয়ের ভাষাটা তার জানা ছিল। আরও যোগ করতে চাই কবরী সম্পর্কে, কবরীকে অভিনয় করতে হয়নি, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যা করতেন, সেটাই অভিনয় হয়ে যেত।

শাবানার সঙ্গে নায়ক হিসেবে ফারুক অভিনয় করেন সখী তুমি কার, লাল কাজল সিনেমায়। ফারুক বলেন, শাবানার সঙ্গে খুব বেশি সিনেমা আমি করিনি। অল্প সিনেমা করেও শাবানা ও আমার ভালো একটি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। শাবানার নামটাই আমাদের দেশের সিনেমার জন্য একটি ইতিহাস। অনেক বড় মনের মানুষ। শিল্পী হিসেবেও অনেক বড়। ভাই ভাই সিনেমায় আমরা ভাই বোনের চরিত্রেও অভিনয় করেছি। শাবানা দেশে নেই  অনেক বছর। শেষ এসেছিলেন আজীবন সম্মাননা নিতে। সেই সময়ে বাসায় যাওয়ার পর লুচি বানান শাবানা। আমি চলে আসব তখন বললেন, আমার হাতের লুচি রে ফারুক, তুই কিন্তু খেয়ে যাবি। এই যে মায়া করে বলা, বন্ধু কিংবা ভাই বোনের সম্পর্ক তা কি ভুলতে পারব? সবশেষে শাবানাকে নিয়ে বলব, অল্প সিনেমা করেও শাবানা ছিলেন আমার স্বর্ণালি যুগের সিনেমার অন্যতম নায়িকা।

ফারুক ও ববিতা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। সিনেমাগুলো হচ্ছে-আলোর মিছিল, নয়ন মনি, গোলাপি এখন ট্রেনে, লাঠিয়াল, মিয়া ভাই। গোলাপি এখন ট্রেনে সিনেমাটি দেশে বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার প্রাপ্ত একটি সিনেমা। নয়ন মনি এদেশের প্রেমের সিনেমার মধ্যে একটি কালজয়ী সিনেমা। নয়ন মনি সিনেমাটি করার পর ফারুক ববিতা জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।

ববিতা সম্পর্কে ফারুক বলেন, প্রথম প্রথম ববিতার সঙ্গে ততটা চেনা জানা ও বন্ধুত্ব না থাকলেও সিনেমা করার পর তার সঙ্গে ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ববিতাকে সব সময়ই কাছের মানুষ মনে করতাম, এখনো করি। অভিনয় সুন্দর করার জন্য যত রকম চেষ্টা করতে হতো, সব ওর মধ্যে ছিল।

নায়ক হিসেবে ফারুক রোজিনার সঙ্গে অভিনয় করেন হাসু আমার হাসু, মান অভিমান, সুখের সংসার, সাহেব, শেষ পরিচয় সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায়। সবগুলোই ছিল সামাজিক গল্পের সিনেমা। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষরা সিনেমাগুলো বেশ ভালো ভাবেই গ্রহণ করেন। নায়িকা রোজিনা সম্পর্কে ফারুক বলেন, নায়িকা বলি বা সহশিল্পী বলি, রোজিনা সাংঘাতিক রকমের একজন কর্মঠ মেয়ে। এত কষ্ট করেছে একটা সময়ে আমাদের সিনেমায় এসে! নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন রোজিনা। একটা অবস্থান তৈরি করতে অনেক পথ হাঁটতে হয়েছে তাকে। শিল্পীরা সহজে হারে না, রোজিনা তেমনি হার না মানা একজন শিল্পী। ওর সাকসেস আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে।

ফারুকের আরও যত নায়িকা: নায়ক হিসেবে ফারুক আরও যেসব নায়িকার বিপরীতে কাজ করেছিলেন, তারা হলেন-অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, দিতি, কলকাতার শতাব্দী রায়, সুনেত্রা। অঞ্জনা সম্পর্কে ফারুক বলেন, অঞ্জনা সেই সময়ে অসম্ভব সুন্দরী একজন নায়িকা ছিলেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে অনেক নাম ছিল তার। তারপর সিনেমায় এসে নিজ যোগ্যতা দিয়ে ক্যারিয়ার করেন। দিতি সম্পর্কে ফারুক বলেন, দিতি ছিলেন একজন স্ট্রং নায়িকা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে আসা নায়িকা। অরুণা বিশ্বাস সম্পর্কে ফারুক বলেন, অরুণা বিশ্বাস ছিলেন একজন বংশীয় নায়িকা। বাবা মা দুজনেই বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন। সুচরিতা সম্পর্কে বলেন, সুচরিতার মধ্যে গড গিফটেড কিছু ব্যাপার ছিল, ন্যাচারাল অভিনয় করতেন।

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

14h ago