সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন মেয়েটি তো দারুণ ফটোজেনিক!

বাংলাদেশের সিনেমায় ববিতা একটি উজ্জ্বল তারকার নাম। স্বর্ণালী দিনের নায়িকা তিনি। সাতবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও। অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন ববিতা। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে ববিতা বলেন তার পেছনের গল্প।
Bobita
ববিতা। ছবি: স্টার

বাংলাদেশের সিনেমায় ববিতা একটি উজ্জ্বল তারকার নাম। স্বর্ণালী দিনের নায়িকা তিনি। সাতবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও। অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন ববিতা। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে ববিতা বলেন তার পেছনের গল্প।

“তখন পুরনো ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে থাকি। দুই কী তিনটি সিনেমা করেছি। হঠাৎ আমাদের বাসার ঠিকানায় আমার নামে একটি চিঠি এলো। চিঠির বিষয় ছিলো, সত্যজিৎ রায়ের মতো বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে ছবির ব্যাপারে দেখা করতে যেতে হবে ভারতে। চিঠি পড়ে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে প্রায় পড়েই গিয়েছিলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো, কেউ বুঝি মজা করার জন্য অমন চিঠি লিখেছে।

কিছুদিন পর বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস থেকে বাসায় ফোন করে আমাকে আবারো বলা হয়, সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে। তখন আমরা সবাই সিরিয়াস হলাম। ভাবলাম, ওটা মজা ছিলো না, সত্যি ছিলো। তখন আমার বয়স ১৬ বছর। তারপর সুচন্দা আপাকে নিয়ে কলকাতায় যাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করতে।

কলকাতায় যাওয়ার পর অনেক সুন্দর সুন্দর ঘটনা ঘটে। মনে পড়ে, এক সময় স্ক্রিপ্ট হাতে পাই। তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া হয়। সাধারণ একটি শাড়ি পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। সত্যজিৎ রায় বলেন, ‘মেয়েটি তো দারুণ ফটোজেনিক’!

তার হাত ধরে জয়া ভাদুড়ি, শর্মিলা ঠাকুর সিনেমায় আসেন। আমারও যাত্রা শুরু হলো তার ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় কাজ করার মাধ্যমে। শান্তি নিকেতনে শুটিং করার দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। বিশেষ করে শান্তি নিকেতনে যে বাড়িটিতে শুটিং করেছিলাম, সেই বাড়িটির কথা এবং শুটিং করার কথা এবং শুটিং করার ফাঁকে আড্ডার সময়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ে।

শুটিং-ডাবিংয়ের শেষের দিকে একদিন সত্যজিৎ রায়ের ফোন এলো। তিনি জানালেন, ছবিটি নিয়ে তিনি জার্মানির একটি চলচ্চিত্র উৎসবে যাবেন। তাও মুক্তির আগেই ছবিটি দেখানো হবে বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে। আমাকে নিমন্ত্রণ করা হলো। আমি তো মহাখুশি! আমার সিনেমা যাচ্ছে এতো বড় একটি দেশের উৎসবে! রাজি হয়ে গেলাম। সেখানে সিনেমাটিকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘গোল্ডেন বিয়ার’ দেওয়া হয়। সত্যজিৎ রায়ের নামের পাশাপাশি আমার নামটিও সবাই জানলেন। ওটা ছিলো বিরাট প্রাপ্তি।

‘অশনি সংকেত’র নায়িকা হিসেবে আমি ভারতে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিজম এসোসিয়েশনের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পাই। পুরস্কার নেওয়ার দিনটি ছিলো আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটি দিন। এখনো সেই দৃশ্য চোখে ভাসে।

অভিনয় জীবনে বহু দেশ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছি বড় বড় ফেস্টিভালে যাওয়ার জন্য। মনে আছে, শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নে আট থেকে দশবার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম এবং সেখানে গিয়েছিলাম শিল্পী হিসেবে। সেখানকার কতো স্মৃতি রয়েছে। সেখানে গিয়ে একবার ভাত খেতে না পারার জন্য মন খারাপ করে ছিলাম। তারপর সেখানকার বাংলাদেশি ছাত্ররা আমাকে নিমন্ত্রণ করে ভাত খেতে দেয়। কী যে শান্তি পেয়েছিলাম তখন।

রাশিয়াতে একবার ট্যাক্সি করে ঘুরছি। ড্রাইভার আনন্দে চিৎকার করে বলেন, ‘ববিতা, ববিতা’। আমি তো অবাক। ড্রাইভার আমাকে চিনলেন কেমন করে। পরে জেনেছি বিমানবন্দরে কয়েকটি বিলবোর্ডে আমার ছবি ছিলো। আমার কয়েকটি ছবি রাশিয়াতে ওদের ভাষায় ডাবিং করে সেই সময় দেখানো হয়েছে। এজন্য ড্রাইভার আমাকে চিনতে পেরেছিলেন।

আমি তো সামাজিক, বাণিজ্যিক সব ধরনের সিনেমা করতাম। শুটিং করার জন্য কয়েক মাসের জন্য বেরিয়ে যেতাম। কতো সুখের স্মৃতি রয়েছে আউটডোরে শুটিংয়ের।

নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমার শুটিং করেছিলাম কাপ্তাইয়ের দিকে একটি জঙ্গলের ভেতরে এবং পাহাড়ে। শেষ দৃশ্যটি ছিলো আমি ও রাজ্জাক কাছাকাছি আসি। ভীষণ রোমান্টিক দৃশ্য ছিলো সেটি। একই সঙ্গে খুব ইমোশনাল দৃশ্যও ছিলো। তারপর আমরা মারা যাই। শুটিং শেষ করে ফিরে আসবো, তখন আমি কান্না শুরু করি। রাজ্জাক ভাই আমাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। এই ঘটনাটিও খুব মনে পড়ে।

দুই বছর আগে কাপ্তাইয়ের সেই জায়গাটিতে গিয়েছিলাম বেড়াতে। যাওয়ার পর আমি তো রীতিমতো মুগ্ধ এবং অবাক হয়ে যাই। ওখানে গিয়ে জানতে পারি, যে পাহাড়ে শুটিং করেছিলাম, সেই পাহাড়টির নাম হয়ে গেছে ‘ববিতা পাহাড়’! আমি শুটিং করেছিলাম বলে একটি পাহাড়ের নাম আমার নামে হয়ে গেছে, এটি আমাকে কী যে আনন্দ দিয়েছিলো তা বলে বুঝাতে পারবো না।

পেছনে ফিরে তাকালে অভিনয় জীবনের এরকম শত-শত গল্প আজও মনে পড়ে। স্বর্ণালী দিনের সিনেমায় কী সুন্দর দিনই না কাটিয়েছি!

Comments

The Daily Star  | English
Prime Minister Sheikh Hasina

Take effective steps to get maximum benefit after LDC graduation: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today asked all concerned to take effective steps for availing maximum benefits and facilities after the country's graduation from LDC status in 2026 and also to devise strategies to face the challenges following the graduation

1h ago