ভিসা তো বাতিল করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, আমার কিছুই করার নেই: ফেরদৌস

Ferdous
অভিনেতা ফেরদৌস। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

২১ বছরের সিনেমার ক্যারিয়ার ফেরদৌসের। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চারবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সম্প্রতি ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘পুত্র’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে নতুন করে পেতে যাচ্ছেন এ পুরস্কার। তার সমসাময়িক নায়কদের মধ্যে পাঁচবার এই পুরস্কার আর কোনো নায়ক পাননি।

কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতীয় বাংলা সিনেমায়ও তিনি নিয়মিত কাজ করছিলেন। অনেক সিনেমা করেছেন কলকাতায়। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে ব্যাপক ব্যবসাসফল একটি সিনেমা।

১৮ নভেম্বর থেকে তিনি আছেন নোয়াখালীতে। সেখানে ‘গাঙচিল’ সিনেমার শুটিং করছেন। এটি পরিচালনা করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। মুঠোফোনে ফেরদৌস দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

২১ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এটিকে কীভাবে দেখছেন?

স্বীকৃতি অবশ্যই ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। চাইলেই অন্যকিছু করতে পারতাম। কিন্তু, অভিনয়ের পথটাই বেছে নিয়েছি। একুশটি বছর এই পথে হাঁটছি। সংগ্রাম, কষ্ট, ভালোবাসা, সবকিছু অভিনয়ের জন্য দিয়েছি। কাজেই যখন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারটি আমার ঘরে আসে, ভীষণ আনন্দ কাজ করে।

সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সিনেমা নির্মাণ কমে আসছে, এই বিষয়গুলো কতোটা ভাবায় একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে?

এই বিষয়টি কেবল ভাবায় না, খুব কষ্টও দেয়। বিশ কিংবা পনেরো বছর আগেও সমানে সিনেমা নির্মিত হতো। অসংখ্য সিনেমা হলও ছিলো আমাদের। দিন দিন সিনেমা হল কমে যাচ্ছে- এটা তো আমাদের সিনেমা শিল্পের জন্য দুঃসংবাদ। যেভাবেই হোক এর থেকে বের হয়ে আসা দরকার। সেটা একক কারও চেষ্টায় হবে না। আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে- কীভাবে এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।

আপনি নিজেও তো সিনেমা প্রযোজনায় নাম লিখিয়েছেন, নতুন কোনো সিনেমা কি প্রযোজনা করতে যাচ্ছেন?

দেখুন, সিনেমা নির্মাণ কমে যাচ্ছে ওই ভাবনা থেকেই কিন্তু সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেছিলাম। ‘এক কাপ চা’ দিয়ে শুরু করি। এরপর ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ সিনেমাটি প্রযোজনা করি। বেশ কয়েকটি সিনেমার শুটিং করছি। কাজগুলো শেষ করতে পারলে নতুন করে প্রযোজনা নিয়ে ভাববো। তবে, আগামী বছর সেটি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘গাঙচিল’ সিনেমার শুটিং এর জন্য নোয়াখালীতে আছেন, এই সিনেমাটির বিষয়ে জানতে চাই?

‘গাঙচিল’ সমুদ্র তীরবর্তী মানুষদের জীবনের গল্প। আগেও এখানে শুটিং করেছি। গেলো বছর এখানে শুটিং করতে এসে তো মোটরসাইকেল অ্যাকসিডেন্ট করি। এবার শুটিং শেষ করেই ফিরবো। শুধু গানের শুটিং  বাকি থাকবে। আমি ও পূর্ণিমা আছি। ফেনী শহরে থাকছি। এখান থেকে ভোরবেলা বের হয়ে যাই নোয়াখালীর একটি গ্রামে। রাতে শুটিং শেষ করে ফিরে আসি।

‘গাঙচিল’ সিনেমা ও আপনার চরিত্রে নতুনত্ব আছে কি?

এটি তো উপন্যাস থেকে নেওয়া। মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘গাঙচিল’ নামে একটি উপন্যাস আছে। সেখান থেকে গল্প নেওয়া হয়েছে। এই ধরণের গল্প নিয়ে সিনেমা কমই হয়েছে। সেদিক থেকে নতুন। আমি প্রথমবার টেলিভিশন রিপোর্টারের চরিত্রে অভিনয় করছি। এখানেও আমার জন্য নতুনত্ব আছে।

অভিনয়ের বাইরে ব্যক্তি ফেরদৌস হিসেবে কী ধরণের কষ্ট কাজ করে?

আমরা যেখানে শুটিং করছি, এটি একটি নদী এলাকা। কয়েক মাস আগে এখানে একটি গ্রামে শুটিং করে গেছি। এবার এসে দেখি সেই গ্রামটি নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একজন ব্যক্তি ফেরদৌস হিসেবে এটি আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। এখানে এসে যখন নিজ চোখে দেখি গ্রামটি নেই– তখন খারাপ লেগেছে।

আপনি অনেকবার বলেছেন- ‘দেবদাস’ আপনার ভীষণ পছন্দের চরিত্র, এবার তো দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করছেন, কেমন লাগছে কাজটি?

কিশোরবেলায় ‘দেবদাস’ পড়ার পর থেকেই দেবদাসের জন্য এক ধরণের মায়া কাজ করতো। তারপর সিনেমায় নায়ক হওয়ার পর অনেক ভেবেছি যদি দেবদাস চরিত্রটি আমি যদি করতে পরতাম! কিন্তু, বাংলাদেশ এবং ভারতে দেবদাস নিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরি হয়েছিলো আগেই। তারপরও এবার আমার চাওয়া পূরণ হয়েছে। আরিফ খান একটি সিনেমা পরিচালনা করছেন। সিনেমার নাম ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’। ওখানে আমি দেবদাসের চরিত্রে অভিনয় করছি। কাজ অনেক দূর হয়েছে। বলতে পারেন, আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

মুনমুন সেনের সঙ্গে আপনার পারিবারিক সম্পর্ক, কখনো কি সুচিত্রা সেনকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো?

হয়েছিল। একবার আমি ও মুনমুন সেন একটি অনুষ্ঠানে যাবো। মুনমুনকে বলেছিলাম- তোমাকে আমি এসে নিয়ে যাবো। আমি ওদের বাড়িতে ঢুকেছি মাত্র। দেখলাম কেউ একজন হেঁটে ভেতরে যাচ্ছেন। আমি বুঝে গেলাম ওনিই সুচিত্রা সেন। কেননা, সুচিত্রা সেন তো বাইরের কারও সামনে আসেন না। আমাকে দেখে তিনি দ্রুত হাঁটেন। আমি দ্রুত হাঁটছি সুচিত্রা সেনকে দেখে তিনি আরও জোরে হাঁটেন। হঠাৎ তিনি দৌড়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে দরোজা বন্ধ করে দিলেন। অনেকবার বললাম, দরজা খুলুন। কিন্তু, লাভ হয়নি। পরে মুনমুন এসে দেখে আমি ডাকছি। মুনমুন বলল- মা বের হবেন না। আরেকদিন সন্ধ্যাবেলায় ওই বাড়িতে ঢুকে দেখি সুচিত্রা সেন চেয়ারে বসে আছেন। আমি তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখি।

সুচিত্রা সেনের এর জন্য কখনো কোনো উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন?

একবার নিয়ে গিয়েছিলাম। উনার মেয়ে মুনমুন আমাকে উনার কিছু পছন্দের গানের কথা বলেছিলেন। দেখুন, সুচিত্রা সেনতো এই দেশেরই মেয়ে। আমি একবার সুচিত্রা সেনের জন্য জামদানি শাড়ি আর উনার পছন্দের গানের সিডি নিয়ে গিয়েছিলাম। উপহারটা পাওয়ার পর তিনি ফেরত নেওয়ার কথা মুনমুনকে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম- আমরা একবার উপহার দিলে তা কখনো নিই না। যাই হোক, ওই বাড়িতে আরও অনেকবার গিয়েছিলাম, কিন্তু ওই দুইবারই সুচিত্রা সেনকে দেখেছিলাম।

আপনি কলকাতার বাংলা সিনেমায়ও নিয়মিত অভিনয় করেছেন, কিন্তু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপনার ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তা এখন কী অবস্থায় আছে?

ভিসা তো বাতিল করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আমার দিক থেকে কিছুই করার নেই। আমার বিশ্বাস যারা ভিসা বাতিল করেছেন তারা শিল্পী হিসেবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করবেন। আমি সমাধানের  আশায় আছি। আমি চাই সমস্যাটির সমাধান হোক, আবার আমি দুই দেশেই সিনেমা করি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

13m ago