ফেসবুক এখনই বাংলাদেশে অফিস খুলছে না
বাংলাদেশে ফেসবুকের অফিস খোলার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যান নিয়ারি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সেবা প্রদানেই প্রতিষ্ঠানটি সন্তুষ্ট।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড্যান নিয়ারি বলেন, “বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনো অফিস খোলার পরিকল্পনা আমাদের নেই। বিশ্বজুড়ে আমাদের কমিউনিটি ছড়িয়ে আছে। কিন্তু, সব দেশেই আমাদের অফিস নেই।”
চলতি মাসেই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৪ দেশের সাংবাদিকদের তাদের সিঙ্গাপুর অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো ফেসবুক। সেখানে একটি অধিবেশনেও ফেসবুকের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে নিয়ারি বলেন, “বর্তমানে পরিকল্পনা নেই মানে এই নয় যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।”
গত সেপ্টেম্বরে ফেসুবক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পরে সরকারের প্রতিনিধি দল জানিয়েছিলো, ফেসবুক বাংলাদেশে একটি অফিস খুলতে আগ্রহী এবং তারা এখানে আঞ্চলিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে।
এছাড়া, সর্বশেষ বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছিলো প্রত্যেকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বাংলাদেশে অফিস চালু করতে হবে অথবা প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে। এনবিআর আরও নির্দেশ দিয়েছিলো এসব প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ৪ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই যায় ফেসবুকে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারের ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য না করলেও নিয়ারি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের নতুন ভ্যাট আইন মেনে চলতে অন্যদের সঙ্গে ফেসবুকও যুক্ত থাকবে।”
নিয়ারি জানান, ফেসুবকের একটি দল রয়েছে, যারা বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আঞ্চলিক অফিসে বসেন এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, ফেসবুক স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করছে। “আমরা বাংলাদেশের এসএমই থেকে শিখছি এবং তাদের লক্ষ্য অর্জন ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে বিনিয়োগও করছি,” যোগ করেন ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
“কীভাবে এসএমই খাতকে ব্যবহার করে ফেসবুক থেকে ব্যবসা বাড়ানো যায় তা নিয়ে আমরা গবেষণা করছি,” যোগ করেন নিয়ারি।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের প্রায় ২৪৫ কোটি ব্যবহারকারী আছেন যারা মাসে অন্তত একবার ফেসবুক ব্যবহার করেন। এই গ্রাহক প্রতি বছর ৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ডিজিটাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেপোলিওনকাটের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩৭ লাখ।
তবে, গত আগস্টে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফলে বাংলাদেশ ফেসবুকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পরিণত হয়েছে এবং এখান থেকে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে।
নিয়ারি বলেন, ফেসবুকের লক্ষ্য মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সব মানুষকে পরস্পরের কাছে আনা।
তার মতে, “ফেসবুক তার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় মানুষদের মধ্যে বন্ধন বাড়াতে ও তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে চাই।”
বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নিয়ে কাজ করতে ফেসবুক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানায়। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে ২০১৮ সালে ইউনিসেফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রচারণা শুরু করেছে।
এছাড়াও ফেসবুক ও বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক মিলে নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সচেতনতা নিয়ে কাজ করেছে। এই প্রোগ্রামে ১০ লাখের বেশি নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছে তারা। এর মাধ্যমে এসব ব্যবহারকারীরা সচেতন হচ্ছে এবং তারা অনলাইনে নিরাপদ থাকার উপায়গুলোও শিখতে পারছে।
সম্প্রতি, ফেসবুক এবং বাংলালিংক মিলে আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল বিশ্বের কাছে কীভাবে একজন নারী নিজেকে তুলে ধরবেন তা শেখাচ্ছে ফেসবুক।
বিশ্বকে মানুষের আরও কাছে আনতে ফেসবুকের একটি প্রধান অংশ হলো সংবাদ- এমনটিই মনে করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে নিয়ারি বলেন, “আমরা সাংবাদিকতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছি, কারণ এটিই ভবিষ্যতে অন্যতম মাধ্যম হবে। এজন্য আমরা প্রকাশকদের নিয়ে কাজ করছি, তাদের ব্যবসাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ বিষয়টিতে ভালোভাবেই মনোনিবেশ করেছে ফেসবুক।”
ফেসবুক জার্নালিজম প্রকল্প (এফজেপি) মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা এবং সংবাদ সংগ্রহকে সমর্থন করে। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ ও গুণগত সংবাদ সরবরাহে ফেসবুক কাজ করছে।
নিয়ারি বলেন, “আমাদের সাংবাদিকতা প্রকল্পটি তিন ভাগে কাজ করছে। সেগুলো হলো: সংবাদের মাধ্যমে একটি কমিউনিটি গড়ে তোলা, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার ওপর প্রশিক্ষণ এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গুণগতমান নিশ্চিত করা।”
(ঈষৎ সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Facebook has no plan to open office in Bangladesh now লিংকে ক্লিক করুন)
Comments