দেশীয় টিভি চ্যানেল মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ায় দেখা যাচ্ছে না, ২০ শতাংশ দর্শক কমে গেছে

গত অক্টোবর থেকে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আর বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে না।

ফলে সেসব দেশে থাকা বাংলাদেশিরা দেশীয় খবর এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলো প্রায় ২০ শতাংশ দর্শক হারিয়েছে বলে জানিয়েছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন মালিকরা।

গত অক্টোবর থেকে আগের স্যাটেলাইট বাদ দিয়ে সবগুলো টেলিভিশন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার শুরু করেছে। আর বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটির যেহেতু মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া বা মালয়েশিয়ার কভারেজ নেই সে কারণে সেসব দেশে বাংলাদেশের টেলিভিশনের সম্প্রচারও হচ্ছে না।

তবে এর মধ্যে তিনটি টেলিভিশন– চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজের সঙ্গে হংকংয়ের কোম্পানি অ্যাপস্টার-৭ এর চুক্তি ছিলো ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে বাড়তি তিনমাস তারা এই সব দর্শকদের বাংলাদেশের অনুষ্ঠান এবং খবর দেখার সুযোগ দিতে পেরেছেন।

কিন্তু, গত ১ জানুয়ারি থেকে এই তিনটি টেলিভিশনের সম্প্রচারও ওই সব দেশে গেছে বন্ধ হয়েছে।

সরকারের নিয়মানুসারে অন্য কোনো স্যাটেলাইট কোম্পানি থেকে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। ফলে আপাতত প্রবাসে বাংলাদেশিদের দেশি টেলিভিশন অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা বন্ধ।

মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’র পরিচালক জহিরুদ্দিন মাহমুদ মামুন জানিয়েছেন, ওই দেশগুলোতে তাদের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ লাখ দর্শক আছে।

মামুন বলেন, “আমাদের দর্শকরা চ্যানেল আই দেখতে পাচ্ছেন না এবং তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”

স্যাটেলাইট সম্প্রচার ছাড়াও টেলিভিশনগুলো যেহেতু এখন অনলাইন সম্প্রচারও করে, ফলে দর্শকরা হয়তো কোনো না কোনোভাবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। কিন্তু, বিষয়টি মোটেই সহজ নয় বলেও মন্তব্য করেন ‘চ্যানেল আই’র পরিচালক।

সময় টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্ট সালাহউদ্দিন সেলিমও একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর মোট দর্শকের ১০ শতাংশ ছিলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তাছাড়া মালয়েশিয়ায় ছিলো আরও ৫ থেকে ৭ শতাংশ দর্শক। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ায়ও অন্তত দুই শতাংশ দর্শক ছিলো।

এমনকী, আফ্রিকার দেশগুলোতেও কিছু দর্শক ছিলো এবং তারা সবাই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেলিম।

মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশি টেলিভিশন না দেখা গেলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এর বাইরে থাকছে।

সেলিম জানিয়েছেন, আগের মতোই তারা দেশ দুটিতে টেলিভিশনগুলোর অনুষ্ঠান পাঠানোর ক্ষেত্রে আইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে এখন থেকে আইপির মাধ্যমে অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্যাটেলাইটের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তারা সেখান থেকে আবার আপলিংক করছে। ফলে বাড়তি কিছুটা সময় লাগলেও সব টেলিভিশনের অনুষ্ঠানই ওই দুটি দেশে থাকা বাঙালিরা দেখতে পাচ্ছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানিয়েছেন, সরকারের দিক থেকে স্যাটেলাইট টেলিভিশন কোম্পানিগুলোর কাছে প্রতিশ্রুতি ছিলো সমস্যার বিকল্প একটি সমাধান করে দেওয়া হবে। কিন্তু, তিনি নিশ্চিত নন কেনো এখনো সেটি করা যায়নি।

একটি স্যাটেলাইট কোম্পানির ব্যবসা সফল সেবার জন্যে অন্তত তিনটি স্যাটেলাইট দরকার। যেহেতু বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট কোম্পানির হাতে এখন মাত্র একটি স্যাটেলাইট-ই আছে তাই অন্য স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করতে হবে অথবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।

“আমার জানা মতে, বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট কোম্পানি সেসব দেশে যাতে আমাদের টেলিভিশনের সম্প্রচার চলে তার জন্যে অন্য স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছিলো।”

বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, দেশীয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্প্রচার কীভাবে ওই দেশগুলোতে চালু রাখা যায় সে বিষয়ে তারা আলোচনার মধ্যে আছেন।

কিন্তু বিস্তারিত কিছু না বলে তিনি জানিয়েছেন, “খুব তাড়াতাড়ি সবাই ভালো খবরটা জানতে পারবেন।”

২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ঠিক এক বছর পরে এসে সেটি বাণিজ্যিক সেবা শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সরকারের মোট খরচ হয়েছে দুই হাজার ৭০২ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় যেটি দিয়ে সহজেই মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া কাভার করা যায়। কিন্তু, ডিজাইন করার সময় হয়তো ৩০-৪০ কোটি টাকা খরচ কমাতে এই দুটি দেশকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট কোম্পানির কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে অ্যাপস্টার-৭ এর অবস্থান ৭৬.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায়। এটি দিয়ে সহজেই জার্মানির মিউনিখ পর্যন্ত কাভার করা যায়। তাছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও দর্শকরা সহজেই সেবা নিতে পারেন।

এর বাইরেও ঢাকার স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোকে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে লিংক করে গাজীপুরে স্যাটেলাইট ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে সম্প্রচার করতে হচ্ছে। যা আরও একটি বাড়তি সমস্যা তৈরি করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সব সময় ব্যান্ডউইথ একরকম থাকে না। তাছাড়া, ফাইবার অপটিক কেবল কাটা পড়ার ঝুঁকিও আছে, বলছিলেন মাছরাঙ্গা টিভি’র হেড অব ব্রডকাস্ট অ্যান্ড আইটি এমএম সায়েম।

ব্যান্ডউইথ ডাউন থাকার কারণে গত অক্টোবর থেকে শুরু করে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেলিভিশন ভেদে ৫৮ থেকে ৬২ মিনিট পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট হয়েছে। ফলে সেসময়ে অনুষ্ঠান চললেও তা কেউ দেখতে পাননি।

সেলিম জানিয়েছেন, যেহেতু সেসময়ে সম্প্রচার করা বিজ্ঞাপনও কেউ দেখতে পাননি, তাই বিজ্ঞাপনদাতারাও এখন এর বিল দিতে চাচ্ছেন না। ফলে ব্যবসায়ীকভাবেও তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

আর সে কারণে অ্যাপস্টার-৭ এর তুলনায় কম খরচে সম্প্রচারের সুবিধা দিলেও নানা দিকে থেকে জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে টেলিভিশনগুলোকে, বলছিলেন টেলিভিশন মালিকরা।

দ্য ডেইলি স্টার আরও অন্তত দুজন টেলিভিশন মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, দেশীয় স্যাটেলাইট হিসেবে তাদেরও বাড়তি ভালোবাসা আছে। কিন্তু, সরকার চাপ না দিলে তারা হয়তো আগের স্যাটেলাইট ছেড়ে এখানে আসতেন না।

তাদের মতে, দেশীয় স্যাটেলাইটটিতে আরও কিছু কারিগরি জটিলতা রয়ে গেছে। টেলিভিশন মালিক বা ব্রডকাস্টে অভিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে ডিজাইনের সময়ে আলাপ করে নিলে তা এড়ানো যেতো। কিন্তু, পরিকল্পনা করার সময় সরকার তাদেরকে ডাকেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago