যানবাহন নিবন্ধন কমেছে ঢাকায়

স্টার ফাইল ছবি

২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ঢাকায় যানবাহন নিবন্ধন কমেছে। এছাড়া, গত দুই বছর ধরে সারাদেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দ্বারা নতুন ও রিকন্ডিশনড গাড়ি এবং মাইক্রোবাসের নিবন্ধনও কমছে।

এর কারণ হিসেবে যানবাহন বিশেষজ্ঞ এবং আমদানিকারকরা রাইড-শেয়ারিং সেবার জনপ্রিয়তা এবং রিকন্ডিশনড গাড়ির দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।

তবে, গত বছর ঢাকা ছাড়া সারা দেশে নতুন মোটরসাইকেলের নিবন্ধন বেড়েছে।

বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৪৩৪টি যানবাহন নিবন্ধিত হয়। যার মধ্যে মোটরসাইকেল ২৭২টি এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ৪১টি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দৈনন্দিন বাহন হিসেবে যাত্রীরা মোটরসাইকেল বেছে নেওয়ায় রাজধানীর যানজট কমতে পারে। কারণ, ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বেশি জায়গা দখল করলেও যাত্রী পরিবহন করে কম।

শহরে দিন দিন মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণ হলো এগুলো যানজটের সময়েও অল্প জায়গা দিয়ে চলাচল করতে পারে। তবে মোটরসাইকেলকে বাহন হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বছর সারাদেশে ৫.০৪ লাখ যানবাহন নিবন্ধিত হয়। এরমধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত হয় ১.৫৮ লাখ যানবাহন। আর ২০১৮ সালে সারাদেশে গাড়ির নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৪.৯৭ লাখ, এরমধ্যে ঢাকায় ছিল ১.৭১ লাখ।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেলস ইমপোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক রিকন্ডিশনড গাড়ির শুল্ক কাঠামোকে বৈষম্যমূলক দাবি করে বলেন, এ কারণেই রিকন্ডিশনড গাড়ির দাম বাড়ছে।

তিনি জানান, রাইড-শেয়ারিং সেবার জনপ্রিয়তার কারণেও মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না।

উবারের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কম সংখ্যক গাড়ির মাধ্যমে বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য কাজ করছি আমরা।

২০১৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড-শেয়ারিং পরিসেবা শুরু হয়। মোটরসাইকেলের অন্তর্ভুক্তি রাইড শেয়ারিংকে আরও জনপ্রিয় করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১২টি নিবন্ধিত রাইড-শেয়ারিং কোম্পানি রয়েছে। এদের আওতায় এক লাখ যানবাহন (বিশেষ করে গাড়ি এবং মোটরসাইকেল) মানুষকে সেবা প্রদান করছে।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মর সজল রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “২০১৭ সালে গাড়ি পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু, রাইড-শেয়ারিং সেবা ব্যবহার করা আমার কাছে সুবিধাজনক মনে হওয়ায় সিদ্ধান্ত বদল করেছি।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক জানান, বিআরটিসি ৬০০ নতুন বাস কিনেছে। তবে, ঢাকা ও এর আশেপাশে কয়েকটি নতুন বাস রুট চালু হওয়ায় বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

“ঢাকার যানজট কমাতে এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ,” অধ্যাপক শামসুল হক বলেন।

বিআরটিএ এর পরিচালক সিতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, যানবাহনের সংখ্যাকে প্রভাবিত করবে এমন কোনো নীতি বা ফি পরিবর্তন করেননি তারা। তবে, যানবাহনের সংখ্যা হ্রাসে গাড়ির আমদানি শুল্ক বা অন্যান্য শুল্কের ভূমিকা থাকতে পারে।

ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমে গত বছরে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৬ তে। ২০১৭ সালে এর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৫৭৩। একই সময়ে ঢাকার বাইরে এই সংখ্যা ২১ হাজার ৯৫৯ থেকে কমে ১৬ হাজার ৭৮৩ হয়েছে।

গত বছর দেশে ট্রাক ও মাইক্রোবাসের নিবন্ধন কমলেও নতুন বাস ও মিনিবাসের নিবন্ধন বেড়েছে।

গত বছর সারাদেশে বাস এবং মিনিবাসের নিবন্ধন হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৬০৬ এবং ৮৩৭। ২০১৮ সালে যা ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৭৫৫ এবং ৪৩৬। বিআরটিসি গত বছর ৬০০ বাস আমদানি করে। যা বাসের নিবন্ধন সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩.০১ লাখ। এরমধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ১৫.২৮ লক্ষ যানবাহন।

তবে, বর্তমানে এসব নিবন্ধিত যানবাহনের কতটি চলাচল করছে পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে তার কোনো তথ্য নেই। এছাড়া রাস্তায় চলাচলকারী অনিবন্ধিত যানবাহন তো রয়েছেই।

Comments

The Daily Star  | English

Four of a family killed in Sylhet hillock collapse

The incident occurred around 2:00am in Bakhtiarghat area under Lakshanaband Union of Golapganj upazila

10m ago