পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৭৮০ কোটি টাকা

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে আরও ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়াতে হবে। ফলে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Padma Bridge
নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে আরও ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়াতে হবে। ফলে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারকে বেসরকারি জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৩০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) জমি ব্যবহার বাবদ ৬৫০ কোটি টাকা দিতে হবে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রকল্পের বিদ্যমান তহবিল থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করা হবে। তাই আপাতত কোনও অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হবে না।

জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রোফর্মার (ডিপিপি) অনুমোদনের প্রায় দেড় বছর পর এই অতিরিক্ত ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে। এর আগে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পটির অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ানো হয়েছিলো প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা হলেও তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

ওই সময় প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পটির পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “এই প্রকল্পটির জন্য আগামী দুই থেকে তিন বছর কোনো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না।”

গত ১২ জানুয়ারি তিনি বলেছিলেন, “প্রথমদিকে আমাদের কিছু সমস্যা ছিলো। কিন্তু, সেগুলো কাটিয়ে উঠেছি। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।”

প্রকল্পটির অপর কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। কারণ, বিদ্যমান বরাদ্দ থেকেই অর্থ আসবে। তবে, স্টেশনগুলোর আকার বাড়ানোসহ কিছু কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছেন, “নতুন জমি কেনার দরকার না হলে এই অর্থ অন্য কাজে ব্যবহার করা যেতো।”

রেল সংযোগ প্রকল্প

২০১৬ সালের মে মাসে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণের জেলা যশোরের যোগাযোগ বাড়াতে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ১৬৯ কিলোমিটার ডাবল-ট্র্যাক রেল লাইন তৈরির জন্য ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটির’ অনুমোদন দেয় একনেক।

কিন্তু, চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের কাজও বিলম্বিত হয়। পরে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়।

বর্তমানে, ঢাকা থেকে খুলনার ৪১২ কিলোমিটার পথ যেতে নয় ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। কিন্তু, এই প্রকল্পটি শেষ হলে ২১৩ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে এবং সময় লাগবে চার ঘণ্টা।

এই রেলপথে মোট ৬৬টি বড় সেতু এবং ২৪৪টি ছোট সেতু, একটি হাইওয়ে ওভারপাস এবং ৪০টি আন্ডারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং ও ২০টি স্টেশন থাকবে।

নতুন অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ছাড়াও কর্তৃপক্ষকে ১ হাজার ৭৮৬ একর বেসরকারি জমি এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ৩৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন।

অতিরিক্ত জমি কেনো?

প্রকল্প পরিচালক ফখরুদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত কাজ শেষ করতে তাদের প্রায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেছেন, “এরপরের ধাপগুলোর জন্য হয়তো অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন নাও হতে পারে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে একর প্রতি গড়ে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা, অর্থাৎ নতুন ১০০ একরের জন্য ব্যয় হবে প্রায় আরও ১৩০ কোটি টাকা।

প্রথম ধাপের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং ফরিদপুর থেকে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, মূলত রুট পরিবর্তনের জন্য এই জমির প্রয়োজন হতে পারে।

(সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Padma Bridge Rail Link Project: Land acquisition could drive up cost লিংকে)

Comments