কর্মীরা চীনে, সাময়িক সংকটে পড়তে পারে মেগা প্রকল্প
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির খুব দ্রুত উন্নতি না হলে, দেশের বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এসব প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত অনেক চীনা নাগরিক এখন চৈনিক নববর্ষ উদযাপনের জন্য ছুটিতে দেশে রয়েছেন। চীনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা হয়তো সময়মতো ফিরতে এবং কাজে যোগ দিতে নাও পারেন, জানিয়েছেন প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ কয়েকশ চীনা নাগরিকের ছুটি এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আরও বাড়ানো হতে পারে। এছাড়াও, অপর কয়েকটি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষও একই ধরণের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
যেসব প্রকল্পে চীনা নাগরিকরা সরাসরি যুক্ত রয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর রেললাইন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (রামু) রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল এবং ঢাকা বাইপাস রোড উন্নয়ন প্রকল্প।
কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রকল্পের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চীনা সংস্থা জড়িত রয়েছে। সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (আরএইচডি) অধীনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পগুলোতে ঠিক কতো সংখ্যক চীনা নাগরিক কাজ করছেন এবং তাদের মধ্যে কতোজন বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন তা নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।
তবে ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, “প্রকল্পগুলোতে কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও শ্রমিকসহ কয়েক হাজার চীনা নাগরিক রয়েছেন।”
গত সপ্তাহে তাদের অনেকেই ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চৈনিক নববর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশে ফিরে গেছেন। এটি তাদের দীর্ঘতম ছুটি।
সম্প্রতি চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ছয় হাজারে।
চৈনিক নববর্ষ বা বসন্ত উৎসব চলাকালে উহানসহ প্রায় ২০টি শহরের পাঁচ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সেসব শহরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ভাইরাসটি এখন আর শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ নেই। ইতোমধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, জার্মানি, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। গত নয়দিনে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত তিন হাজার যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হননি।
গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, “পদ্মা সেতু ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ১০০ জন চীনা নাগরিক কাজ করছেন এবং তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫০ জন ছুটিতে রয়েছেন।”
তিনি জানান, ২২ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওইসব চীনা নাগরিককে কাজে যোগ না দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে এখনও যারা রয়েছেন, তাদের চীনে যেতে নিষেধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, এই প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেকে ছুটিতে গেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি (করোনাভাইরাস) নিয়ে আলোচনা করছি, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “(পরিস্থিতির উন্নতি না হলে) এই প্রকল্পটি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”
অপর এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পে প্রায় ৮০০ জন চীনা নাগরিক কাজ করছেন।
পটুয়াখালীতে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) তাদের কয়েকশ কর্মীর ছুটি এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছে।
বিসিপিসিএল ব্যবস্থাপক (সুযোগসুবিধা) শহীদ উল্লাহ ভুঁইয়া গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কর্তৃপক্ষ ছুটির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।”
তিনি জানান, কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীসহ প্রায় দুই হাজার ২০০ চীনা নাগরিক এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করছেন এবং তাদের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রকল্পের কোনো একটি অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর ছুটিতে গেছেন বা কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন।
“যারা ছুটিতে গেছেন, তাদের এ মাসের শেষের দিকে ফিরে আসার কথা ছিলো। কিন্তু চীনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তাদের ছুটির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে”, যোগ করেন তিনি।
ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি প্রকল্পের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিসিপিসিএল’র এই কর্মকর্তা।
চীনা নাগরিকরা কর্মরত রয়েছেন এমন অপর একটি প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান যে, তারা এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছি।”
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা।
চীন থেকে সম্প্রতি কোনো শ্রমিক কর্মস্থলে এসে যোগ দেননি বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বাইপাস রোড উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পে কর্মরত ৫০ জন চীনা নাগরিকের মধ্যে মাত্র দুজন বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “এ মাসের শেষ অথবা আগামী মাসের শুরুতে তাদের ফিরে আসার কথা ছিলো। তবে এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করি তাদের প্রত্যাবর্তন বিলম্ব হতে পারে।”
Comments