তাঁরা কেন ‘তারা’ হয়ে ওঠেন না

পাকিস্তানের রিয়াজ আফ্রিদি ও তারিক মাহমুদ। অস্ট্রেলিয়ার গ্যারি পোর্টল্যান্ড , ভারতের অভিষেক শর্মা কিংবা বাংলাদেশের আশিকুর রহমান। এই নামগুলো অচেনা লাগছে? লাগারই কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এদের অনেকেরই পা পড়েনি, কেউ খেলেছেন নামমাত্র।
২০০৪ যুব বিশ্বকাপের ফাইল ছবি

পাকিস্তানের রিয়াজ আফ্রিদি ও তারিক মাহমুদ। অস্ট্রেলিয়ার  গ্যারি পোর্টল্যান্ড , ভারতের অভিষেক শর্মা কিংবা বাংলাদেশের আশিকুর রহমান। এই নামগুলো অচেনা লাগছে? লাগারই কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এদের অনেকেরই পা পড়েনি, কেউ খেলেছেন নামমাত্র। অথচ যুব বিশ্বকাপে যথেষ্টই আলোয় এসেছিলেন তারা। তারপর? নানান কারণে হয়ে যান বিস্মৃত,অচেনা।

পাকিস্তানের রিয়াজ ২০০৪ যুব বিশ্বকাপে ছিলেন দ্বিতীয় সেরা উইকেটশিকারী (সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের এনামুল হক জুনিয়র)। অফ স্পিনার তারিক মাহমুদ ছিলেন তৃতীয় সেরা উইকেট শিকারী। সেই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ওই দলটির অধিনায়ক খালিদ লতিফকে হয়ত কেউ কেউ চিনতে পারেন। অল্প কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল তার।

২০১২ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেন তাদের অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদ। ততদিনে ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা সময় চালু হয়ে যাওয়ায় তিনি হয়ত চেনা নাম। কিন্তু  বিশ্বকাপ জয়ী ভারতের এই অধিনায়কও আসতে পারেননি জাতীয় দল পর্যন্ত। ভারতে সেই বিশ্বকাপ জেতা দলের হনুমা বিহারী ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই আর কেউই।

এবার আসা যায় বাংলাদেশের আশিকুর রহমানের বেলায়। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সেই দলের ১১ জন যুব বিশ্বকাপের আগে ও পরে চাপাতে পেরেছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সি। কিন্তু তাদের মধ্যে কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই এখনো টিকে আছেন। ওই দলে খেলা এনামুল জুনিয়র, তালহা জুবায়েরদের যুব বিশ্বকাপ খেলার আগেই টেস্ট অভিষেক হয়ে গিয়েছিল। অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আফতাব আহমেদ অনেকদিন আলো ছড়িয়ে এখন কোচ। নাফিস ইকবাল দেখাতে পারেননি সামর্থ্যের ছিটেফোঁটা।

কিন্তু নাফিস, আফতাবদের সঙ্গে একই যুব বিশ্বকাপে খেলা শিখর ধাওয়ান এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার শিখরেরর সতীর্থ গৌরব ধীমান, ফাইয়াজ ফজল, প্রবীণ গুপ্তকে কারো চেনবার কথা না।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশারও জানান, এইসব পরিসংখ্যান তারও নজর পড়েছে। কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন তিনি, ‘এটা শুধু বাংলাদেশে না। সব দেশেই কমবেশি এমন ঝরে পড়ার ঘটনা আছে। এটা আসলে হয় ইন্ডিভিজ্যুয়াল কারণে। এখন সব দেশেই সুযোগ সুবিধা কিন্তু ভাল। আমাদের যেমন এইচপি আছে, ফার্স্ট ক্লাস আছে, প্রিমিয়ার লিগ আছে।  পরের ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রটা প্রস্তুত থাকে। সব নির্ভর করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর। তার, তাদের নিবেদনটা একই রকম থাকবে কি থাকবে না। তাড়নাটা নিজের ভেতরে না থাকলে মুশকিল। এই কারণে সব দেশেরই অনূর্ধ্ব-১৯ এর ভালো করা অনেক ছেলে পরের ট্রেনটা ধরতে পারে না। দুএকজন যে দুর্ভাগ্যবান হয় না তা না। সেরকমও আছে।’

সব দেশেরই যারা ঝরে পড়েন, তারা তো ঝড়ে পড়েনই। কিন্তু যারা আসতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, সেরকম ক্রিকেটারদেরও তফাত হয় বিস্তর। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা বাংলাদেশ ও অন্যদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে সামর্থ্যের তফাৎ কেন এতটা? 

২০১০ যুব বিশ্বকাপে খেলেছেন ভারতের বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, ছিলেন বাংলাদেশের সোহরাওয়ার্দি শুভ, মোহাম্মদ মিঠুন।  তাদের গতিপথের দূরত্ব বোধহয় আলোকবর্ষ। ২০১২ যুব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বাংলাদেশের এনামুল হক বিজয়। তারচেয়ে কম রান করেছিলেন পাকিস্তানের বাবর আজম আর দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টেট ডি কক। বাবর এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের  কাতারে যাওয়ার পথে, ডি’কক কতটা জৌলুস ছড়িয়েছেন বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বিজয়? না বিজয় তো ঝরে পড়া তারাও না।   তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের জার্সিতে তিনি খেলেছেন অনেকগুলো ম্যাচ। কিন্তু সামর্থ্যের প্রমাণ মেলেনি তার কাছে। কেন? এখানেও আছে হাবিবুলের ব্যাখ্যা,  ‘দেখেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে হলে আপনার এক্স-ফ্যাক্টর থাকতে হয়। এই এক্স ফ্যাক্টর তো আসলে তৈরি করা যায় না। নিজের ভেতরে থাকতে হয়। কে বিরাট কোহলি হবে না কে উন্মুক্ত চাঁদ হবে ওই এক্স ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে।’

খেলোয়াড় এবং আম্পায়ার হিসেবে অনেক ব্যাচের ক্রিকেটারদেরই কাছ থেকে দেখে আসছেন এনামুল হক মনি। ঝড়ে পড়ার হার সব দেশে প্রায় সমান, এই ব্যাপারে তিনিও একমত। তবে যারা ঝরে যান না তাদের পরের ধাপের তফাৎ হওয়ার কারণ নিয়ে আছে তার ভিন্নমত, ‘সারা দুনিয়ায় ২৫ শতাংশের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসতে পারে (যুব দল থেকে), বাংলাদেশের হারটা হয়ত একটু কম। কিন্তু আমাদের লোকাল অবকাঠামোতে ঘাটতি আছে। এই ছেলেরা পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যায়ে কেমন কোচিং পাচ্ছে এটা কিন্তু বড় ব্যাপার। ভারতে কিন্তু বেড়ে উঠার সময়ে বেসিক ঠিক রাখতে লঙ্গার ভার্সনে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের পরিকল্পনাহীনভাবে সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে খেলিয়ে তালগোল পাকানো হয়।’

আকবর আলিরা বিশ্বকাপের মতো ট্রফি জিতেছেন। দেশে উঠেছে তুমুল হাইপ। কম বয়েসেই তারা পাচ্ছেন বীরের মতো সম্মান। হাবিবুল মনে করেন বিশেষ অর্জন হওয়ায় এই হাইপ স্বাভাবিক। এতে তাদের কাছে বাড়ছে প্রত্যাশাও। সেটা পূরণ করতে হলে তাদের নিজেদেরও আত্মনিবেদনের জায়গা হতে হবে তীব্র, ‘বিশ্বকাপ জেতা কিন্তু বিশ্বকাপ জেতা । অবশ্যই বিশেষ। হাইপটা খুব স্বাভাবিক। এদের কাছে আশাটাও বেশি থাকবে। এই চাপ কতখানি নিতে পারবে ইন্ডিভিজ্যুয়ালের উপর নির্ভর করবে। এটা ইতিবাচক যে এদের উপর নজর বেশি থাকবে, সুযোগ সুবিধা পাবে। এখন সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারে তাদের উপরও অনেক নির্ভর করছে।’

Comments

The Daily Star  | English
Net foreign investment in stocks

Foreign investors returning to stock market

After a long time, foreign investors are showing renewed interest in buying shares of listed companies in Bangladesh as they hope good governance will return to the local stock market following the recent political changeover.

11h ago