লিটনের ব্যাটিং যেন চোখের শান্তি

liton das
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

হরদম জঞ্জাল দেখার পর যদি চোখের সামনে পড়ে অবারিত সবুজ, নিশ্চিতভাবে তা দেয় পরম এক শান্তির অনুভূতি। লিটন দাসের ব্যাটিংও যেন তেমনই। অনেকের ভিড়ে যা আলাদা হয়ে দেখা দেয় ভিন্নমাত্রায়। সিলেটের সবুজ চা বাগানে ঘেরা মাঠের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেন ফুল হয়ে ফুটল লিটনের ব্যাট।

ম্যাচের আগের দিন নেটে নেমে মাত্র চার বল খেলেই হুট করে চলে গিয়েছিলেন। পরে কিছুক্ষণ নক করেই সেরেছিলেন অনুশীলন। চোট-টোট নয় তো? জেগেছিল সংশয়। চোট তো নয়ই, লিটন ছিলেন ভীষণ ফিট। তা আর বোধহয় আলাদা করে বলার দরকার নেই। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার (১ মার্চ) যারা লিটনের নয়নভোলানো ব্যাটিং দেখেছেন, তাদের সবারই তা এখন বোঝার কথা। পরে অবশ্য দারুণ ইনিংস ইতিহাস গড়ার ইঙ্গিত দিয়ে থেমেছে চোটের কারণেই।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে লিটন করেন ১০৫ বলে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১২৬ রান। এই রথে চড়ে তিনশ পেরুনো বাংলাদেশ জিতেছে বিশাল ব্যবধানে, রেকর্ড গড়ে। একপেশে উত্তাপহীন ম্যাচে দর্শকদের পয়সা উশুল আসলে লিটনের ব্যাটিংয়ে।

দুনিয়ার খ্যাতিমান অনেক ব্যাটসম্যানই ম্যাচের আগের দিন নেটে বাড়তি পরিশ্রম করেন না। মনঃসংযোগ বাড়িয়ে, শক্তি জমা রাখেন মূল লড়াইয়ের জন্য। লিটন সেই তরিকা নিয়েছিলেন কিনা জানা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো অবশ্য মেধার দিক থেকে দলের সবচেয়ে সেরা মনে করেন লিটনকে। আর তার ব্যাটিংয়ে ছিল স্কিল, শক্তি, মনঃসংযোগ আর সৃষ্টিশীলতার অপূর্ব সমন্বয়।

সিলেটের উইকেট দেখে মনে হয়েছে রানে ভরপুর। টস জিতে ব্যাটিং পেয়ে তামিম ইকবালকে নিয়ে শুরুতেই নজর নিজের দিকে নেন লিটন। এক প্রান্তে তামিম ছিলেন খোলসবন্দি, করছিলেন সংগ্রাম। আরেক পাশে লিটনের ব্যাট থেকে যেন আসছিল তুলির আঁচড়।

অন সাইডে বরাবরই শক্তিশালী তিনি। অফসাইডেও গ্যাপ বের করে নেওয়ার ক্ষমতা যেন দারুণ। চার মারতে লিটনকে খুব একটা জোরাজুরি করতে হয় না। দারুণ টাইমিংয়ে ফাঁক বের করে দিয়েই কাজ সারেন। বাকিটা অপলক দৃষ্টিতে দেখার মতো। বল ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বাউন্ডারির দিকে, তিনি প্রস্তুত নেন পরের বলের। এত যার সামর্থ্য, রহস্যময় ধাঁধা হয়ে ছিল তার ধারাবাহিকতা। ঝলমল করে জ্বলে ওঠা কালেভদ্রে। ৩৪ ম্যাচ খেলে ফেললেও গড়টা মাঝারি মানের। তবে সম্প্রতি বোধহয় নিজেকে কিছুটা বদলেছেন। গত বিপিএলে ধারাবাহিক দেখা গেছে তাকে।

এদিনও ব্যাটিংয়ে লিটন বোঝালেন, ভালো স্ট্রাইক রেট রান উঠানোর পাশাপাশি উইকেটের দামও দিতে বুঝেছেন তিনি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ফিফটি করেই সন্তুষ্ট হয়ে যান দেখে আক্ষেপ ছিল ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির। লিটন এবার ৪৫ বলে ফিফটি করার পর বুঝিয়েছেন, কাজ বাকি ঢের।

তাড়াহুড়ো ছিল না, ঝুঁকিহীনভাবে নিজের স্কিল কাজে লাগিয়ে লিটন চালু রেখেছেন রানের চাকা। ততক্ষণে ৪৩ বলে ২৪ রানের মন্থর ইনিংস শেষ হয়েছে তামিমের। লিটন ঝলমলে থাকায় ওপেনিংয়ে তবু চলে এসেছিল ৬০ রানের জুটি।

দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ৮০ জুটিতেও ৪৮ রানই লিটনের। সেই ২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারপর ১৫ ইনিংসে তিনবার মাত্র ছুঁয়েছেন ফিফটি। ৮০ ছাড়িয়েছেন একবার, নব্বইয়ের ঘর একবার। কিন্তু তিন অঙ্কে আর যাওয়া হচ্ছিল না।

এদিন তাকে দেখা গেছে গোছানো। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তাড়াহুড়ো করেননি। এক, এক করে এগিয়ে পৌঁছান নিরানব্বইতে। সেখান থেকে চার মেরে লিটন পৌঁছান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে।

সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে তার ব্যাট। কব্জির মোচড়ে মিডউইকেট দিয়ে যে দুই দৃষ্টি সুখকর বাউন্ডারি মেরেছেন, তা চেখে নিয়ে একটাই শব্দ বেরুনো উচিত- আহ!

পরে কাভার দিয়ে এসেছে মোলায়েম আরেক চার। মনের ভেতর হয়তো ছিল বিশাল কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তার যে যোগ্যতা, জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিপক্ষে তেমনটা থাকবে না-ই বা কেন! স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরেকে এগিয়ে এসে উড়িয়েছেন লং অন দিয়ে। ওই শট খেলতে গিয়েই অবশ্য হয়েছে বিপত্তি। পেশিতে টান পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ৩৭তম ওভারে ১০৫ বলে ১২৬ রানে পৌঁছে গিয়েছিলেন লিটন। ১৩ চার আর ২ ছক্কায় ছুটছিলেন দুরন্ত গতিতে। যেভাবে এগোচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল, ডাবল সেঞ্চুরিও খুবই সম্ভব!

সামর্থ্য নিয়ে কোনোদিনই প্রশ্ন ছিল না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ইনিংস লিটনের সেন্সিবল ব্যাটিংয়ের প্রমাণ হয়ে থাকল। ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কেউ ডাবল সেঞ্চুরি করলে, সেই নামটা তারই হতে পারে!

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

4h ago