ঢাকা থিয়েটার: সফলতার ৪৭ বছর
যুদ্ধ ফেরত কয়েকজন তরুণ ১৯৭৩ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা থিয়েটার। তাদের মধ্যে অন্যতম নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। সময়ের হাত ধরে ঢাকা থিয়েটার এখন দেশের অন্যতম প্রধান নাটকের দল ও মঞ্চের দর্শকদের কাছে পরিচিত নাম।
এ বছরের জুলাই মাসে ঢাকা থিয়েটার পথচলার ৪৭ বছর পূর্ণ করবে।
১৯৭৩ সালের নভেম্বরে মঞ্চ নাটক নিয়ে প্রথম দর্শকদের সামনে এসেছিল ঢাকা থিয়েটার। ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে সেই নাটকের টিকিটের দাম ছিল দুই টাকা।
সংবাদ কার্টুন শিরোনামের নাটকটি প্রথম মঞ্চায়নেই তারা দর্শকদের ভালোবাসা পেতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর সংবাদ কার্টুন নামটির কথা সবাই জেনে যান। সেলিম আল দীনের রচনা ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় নাটকটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ঢাকার মঞ্চে।
সংবাদ কার্টুন ছাড়াও একই সময়ে মঞ্চে এনেছিল সম্রাট ও প্রতিদ্বন্দ্বীগণ নামের আরেকটি নাটক। এটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাবিবুল হাসান।
এজন্যই ঢাকা থিয়েটার এদেশে ব্যতিক্রম। যুগল নাটক দিয়ে প্রদর্শনী শুরু করেছিল নাট্যদলটি। আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে ঢাকা থিয়েটারের। এই দলটি কেবল মৌলিক নাটক নির্দেশনা দিয়ে আসছে।
‘মৌলিক নাটক মঞ্চায়নের মধ্যে বাংলা নাটকের মুক্তি’— এই স্লোগান নিয়ে দীর্ঘ চার দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে দলটি।
ঢাকা থিয়েটারে একসময় নিয়মিত অভিনয় করেছেন চিরসবুজ অভিনেতা আফজাল হোসেন,
হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জহির উদ্দিন পিয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম, শমী কায়সার প্রমুখ তারকা শিল্পীরা। শহীদুজ্জামান সেলিম এখনো মঞ্চে অভিনয় করছেন নিয়মিত।
ঢাকা থিয়েটার এ পর্যন্ত ৩০টি মঞ্চ নাটক এবং সাতটি পথনাটক মঞ্চায়ন করেছে।
শক্তিমান নাট্যকার সেলিম আল দীন ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের পরম বন্ধু। তার লেখা নাটকই বেশি প্রযোজনা করেছে দলটি। ঢাকার মঞ্চে প্রচলিত ছিল নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সেলিম আল দীন ও ঢাকা থিয়েটার একই ডালের ফুল।
সেলিম আল দীনের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে ও ঢাকা থিয়েটারে বড় কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না?— জানতে চাওয়া হয় নাসিরউদ্দিন ইউসুফের কাছে। তিনি বলেন, ‘সেলিম আল দীনের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে ও আমাদের ঢাকা থিয়েটারে অবশ্যই বড় প্রভাব ফেলেছে। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই। তার অনুপস্থিতির কারণেই ঢাকা থিয়েটার তার লেখা নতুন নাটক মঞ্চে আনতে পারছে না, নতুন চরিত্রও পাচ্ছে না। এটা প্রথমত ঢাকা থিয়েটারের ক্ষতি, সেই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকেরও ক্ষতি।’
মুনতাসির ফ্যান্টাসি, ধূর্ত ওই, কেরামত মঙ্গল, কিত্তনখোলা, ত্রিরত্ন, শকুন্তলা, হাতহদাই, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, বনপাংশুল, বিনোদিনী, প্রাচ্য, মার্চেন্ট অব ভেনিস, একাত্তরের পালা, দ্য টেম্পেস্ট, নিমজ্জন ঢাকা থিয়েটারের দর্শক নন্দিত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শেক্সপিয়ার গ্লোব থিয়েটারে মঞ্চায়িত বাংলা ভাষার প্রথম নাটক হচ্ছে ঢাকা থিয়েটারের দ্য টেম্পেস্ট। এর নির্দেশনা দিয়েছেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
ঢাকা থিয়েটার এখনো মঞ্চ নাটক প্রযোজনায় সরব রয়েছে। নিয়মিত মঞ্চায়িত হচ্ছে পঞ্চনারী আখ্যান, পুত্র ও ধাবমান। এই নাটক তিনটি নিয়ে নিয়মিতভাবে মঞ্চের দর্শকদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে ঢাকা থিয়েটার।
পঞ্চনারী আখ্যান নাটকটিতে রোজী সিদ্দিকী একক অভিনয় করে আসছেন। এর নির্দেশনা দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। ধাবমান ও পুত্র নির্দেশনা দিয়েছেন শিমুল ইউসুফ।
ঢাকা থিয়েটারের আরেকটি সাড়া জাগানো নাটকের নাম বিনোদিনী। দুবছর আগে এটি সর্বশেষ প্রদর্শিত হয়েছে। ১৩০ বার মঞ্চায়ন হওয়া বিনোদিনী মূলত শিমুল ইউসুফের একক অভিনীত নাটক। এর নির্দেশনায় রয়েছেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
নাটকটি নিয়ে শিমুল ইউসুফ বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে কলকাতার মঞ্চ নাটকে পরিচিত মুখ ছিলেন বিনোদিনী দাসী। তাকে নিয়েই এই নাটকের গল্প।’
ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। গ্রাম থিয়েটার এদেশের মঞ্চ নাটকে বড় ভূমিকা রেখেছে।
Comments