দুঃসময়ে সবাই আনন্দে থাকতে পারে না, আমি পারি: জুয়েল আইচ

জুয়েল আইচ। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

জুয়েল আইচকে বলা হয় বিশ্বনন্দিত জাদুশিল্পী। বাংলাদেশকে তিনি বিশ্বের দরবারে পরিচিতি করিয়েছেন জাদু দিয়ে। কেবল জাদু দেখিয়ে কতটা নন্দিত হওয়া যায় আর মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়, তার উদাহরণ তিনি। বিশ্বের বহু দেশে তিনি জাদু প্রদর্শন করেছেন। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবানী, চায়না রেডিও, জার্মান রেডিওসহ পৃথিবীর বহু সম্প্রচার মাধ্যমে তিনি বাঁশিও বাজিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময় জুয়েল আইচ কিভাবে কাটাচ্ছেন তা জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।

মনটা ভালো নেই। স্বাভাবিকভাবেই অন্য সবার মত আমার মনটাও খারাপ। নিজের ঘরে নিজে অনেকটা বন্দি জীবনযাপন করছি। স্বেচ্ছাবন্দি যাকে বলে। কিছু তো করার নেই। ঘরে থাকতেই হবে।

তবে, সময়টাকে নষ্ট করছি না। আমি এমনিতেই প্রচুর বই পড়ি। কয়েক হাজার বই আছে আমার ঘরে। পড়ার নেশাটা আমার বহু দিনের। আমার সবচেয়ে বড় নেশা বই পড়া। এই জায়গায় আমি কোনো ছাড় দেই না। নানারকম বই পড়ি, কখনো কবিতা, কখনো গল্প, কখনো উপন্যাস। ছোট গল্প নিজেও লিখি। এক ধরণের বইয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখি না। আমি গানও পছন্দ করি। সিনেমা পছন্দ করি। আবার বাঁশি বাজাতেও ভালোবাসি। করোনার দিনগুলো আমার সময় কাটছে পড়াশুনা করে।

আমি মনে করি জীবন এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আমাদের বাঁচার সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত। জীবনের শুরুর অংশ ও শেষ অংশে আমরা সবাই দর্শক। মাঝের অল্প সময়টা আমরা কিছু করতে পারি।

করোনার এই সময়টায় গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে পড়াশুনা করছি। আমরা খুব বেশি দূর তাকাই না। কিছুদূর তাকানোর পর বলি, আর দেখা যাচ্ছে না। আপনি যদি বিশ তলা ভবনের ওপরে উঠে তাকান তাহলে অনেক দূর দেখতে পাবেন। এটা আমার উপলব্ধি।

আমি এজন্যই গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে এখন পড়াশুনা করছি। এই যে এত কিছু হচ্ছে, এর সমাপ্তি তো হবে? আমার জীবদ্দশায় হবে কিংবা আমি মারা যাওয়ার পরে হবে।

পড়াশুনা করে জানতে পারছি, এইরকম ভয়ংকর অবস্থা আগেও হয়েছে। বহু বছর পর পর এমনটি ঘটেছে। এইরকম গ্রেট ডিপ্রেশন যতবার হয়েছে, কিভাবে সেখান থেকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে জাতি, কত সময় ধরে সেটা ছিল, এমন নানা কিছু জানছি।

জানছি ডিপ্রেশনের সময়ে কি রকম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেই সময় ভয়ংকর ব্যবসায়ীরা কিভাবে অঢেল টাকার মালিক হয়ে গেল, আর সাধারণ মানুষ মরে গেল।

জুয়েল আইচ। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

এই জীবাণু সারা পৃথিবীতে মানুষ মেরে ফেলছে। জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলে ছিল মিত্র বাহিনী, তার খেসারত এখনো দিচ্ছে জাপানের জনগণ। আর এটা তো জীবাণু অস্ত্র। জীবন শেষ করে দিচ্ছে। আণবিক অস্ত্রের চেয়েও বড়। এটা নিজে নিজে ছড়াচ্ছে। এই জীবাণু কখনো বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, কখনো বাড়ছে গাণিতিক হারে, কখনো পারমানবিক হারে। এটাকে থামাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ইতালি কী কম শিক্ষিত দেশ? সেখানে এটা কি ভয়ংকর ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে? কাজেই আমাদের যাবতীয় ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। চোখের সামনেই তো সব দেখতে পাচ্ছি। জরুরি ব্যবস্থা নিতে দেরি করা যাবে না। করোনাভাইরাসকে ছোট হিসেবে দেখা ঠিক না। এটা গ্রেট ডিপ্রেশন। বড় ধাক্কায় পড়েছি আমরা। এটা মানবজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়াই বড় যুদ্ধ। এটা ভয়াবহ যুদ্ধ।

এ অবস্থায় সবার প্রতি আমার পরামর্শ, কিছু না করা, একা একা থাকা, ঘর থেকে বের না হওয়া। কাজটা সবচেয়ে কঠিন, তারপরও করতে হবে।

একজন থেকে আরেকজনের কম করে হলেও ছয় ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই ভাইরাসটি নাকি পাঁচ ফিটের বেশি বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না। কারও সঙ্গে হাত মেলানো যাবে না। বারবার হাত ধুতে হবে।

সবশেষে বলব, দু:সময়ে সবাই আনন্দে থাকতে পারে না, আমি পারি। খুব কম মানুষই এটা পারে। এই সময়ে বাসায় বসেই যতটা সম্ভব আনন্দে থাকুন। কেননা, জীবন অনেক সুন্দর।

ছবি: শেখ মেহেদী মোশেদ

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

39m ago