বিশ বছর আগের আনন্দাশ্রুর স্মৃতি আজও দোলা দেয় বুলবুলকে

২০ বছর আগে আজকের এই দিনে ক্রিকেটের কুলীন দেশ হওয়ার মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
Bangladesh test status celebration
ফাইল ছবি: এএফপি

২০ বছর আগে আজকের এই দিনে ক্রিকেটের কুলীন দেশ হওয়ার মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ তখন টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মতো অবকাঠামো ছিল না দেশে, ছিল না ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্ত ভিত। জাতীয় দলের সাফল্য বলতে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় আর ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। এসব অর্জনকে সম্বল করেই ক্রিকেট কূটনীতিতে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। সঙ্গী ছিলেন সেসময়ের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক। 

বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির সময়ে জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ২০০০ সালের ২৬ জুন ক্রিকেট-তীর্থ লর্ডসে যখন আইসিসির কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে, তখন সভাস্থলের বাইরেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। 

দ্য ডেইলি স্টারের একুশ তাপাদারের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।

সেদিনের স্মৃতি 

‘আমি তখন ইংল্যান্ডে একটা ক্লাবের হয়ে খেলতাম। সাউথ্যাম্পটনে। ইউনাইটেড সার্ভিসেস অর্থাৎ আর্মি-নেভির-এয়ারফোর্সের একটা সম্মিলিত দলে। আমরা ২৪ বা ২৫ তারিখে জানতে পেরেছিলাম যে, আশরাফুল ভাই, সাবের ভাই (ইংল্যান্ডে) এসেছেন। তাদের সঙ্গে এরপর যোগাযোগ হয়েছিল। ২৬ তারিখে আমি ফোন পেয়েছিলাম প্রয়াত মিশুক মুনীর (শহীদ বুদ্ধিজীবি মুনীর চৌধুরীর ছেলে) ভাই ও সুপন রায়ের (সাংবাদিক) কাছ থেকে। একুশে টেলিভিশন বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির উপলক্ষটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছিলেন। আমি ২৬ তারিখ সকালে লর্ডসের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আমার মনে আছে, সময় তখন আনুমানিক ১১টা কিংবা ১২টা হবে। আমি লর্ডসের ভেতরে কিন্তু সভাস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আশরাফুল ভাই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “বুলবুল, আমরা সর্বসম্মতিক্রমে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি। উনি প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন।” কিছুক্ষণ পর সাবের ভাইও এসেছিলেন। আমরা তিনজন মিলে খুব আনন্দ করেছিলাম।’

Aminul Islam Bulbul
আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: ফেসবুক

‘এক পর্যায়ে তখন মনে হয়েছিল, কত বড় একটা জিনিসের সাক্ষী হয়ে গেলাম। লর্ডস থেকে সুপন ও মিশুক ভাইয়ের সঙ্গে আমি লাইভ অনুষ্ঠান করেছিলাম। ভালো লাগছিল যে, ওরকম একটা অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার আরও মনে আছে, তারা খুব পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন এবং আমার যাতায়াত খরচ বাবদ ১০০ পাউন্ডও দিয়েছিলেন। টাকাটা বড় ব্যাপার ছিল না। কিন্তু আন্তরিকতাটা বড় ছিল।’

নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন বুলবুল 

‘আশরাফুল ভাই ও সাবের ভাই আমাকে বলেছিলেন যে, সন্ধ্যাবেলা যেন আমি অবশ্যই উপস্থিত থাকি। কারণ সংবাদ সম্মেলন রয়েছে। লর্ডসের বাইরে নার্সারি গ্রাউন্ডে সংবাদ সম্মেলন ছিল। সেখানে ম্যালকম গ্রেসহ (আইসিসির তৎকালীন সভাপতি) বড় বড় কর্মকর্তারা ছিলেন। খুব ভালো লেগেছিল যখন আমরা তিনজন বসে শুনতে পেয়েছিলাম যে, টেস্ট স্ট্যাটাস ঘোষণা করা হচ্ছে। দেখছিলাম, কেউ কেউ আবেগে চোখের জল মুছছে। ভাবতে ভালো লাগে যে, ২০ বছর আগের সেই দিনটা নিয়ে এখনও কথা বলতে পারছি, টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির দিনটা নিয়ে কথা বলতে পারছি। এটাও একটা বড় ভাগ্যের ব্যাপার। সেসময় আমি অধিনায়ক ছিলাম। যদিও পরবর্তীতে প্রথম টেস্ট ম্যাচে যে কারণেই হোক অধিনায়কত্ব করতে পারিনি। তবে এটাও বড় প্রাপ্তি আমার জন্য যে, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সময় আমি অধিনায়ক ছিলাম।’

নিজেদের ঢোল নিজেরা পিটিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিল বাংলাদেশ 

‘আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের প্রত্যেকটা ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে অযথাই বলে বেড়াতাম যে, বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ খেলতে প্রস্তুত, বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে প্রস্তুত। ওটাও একটা বড় প্রাপ্তি ছিল যে, বারবার ওভাবে বলার পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিলাম। দেশের মানুষের জন্যও এটা একটা বড় প্রাপ্তির বিষয় ছিল। সকলেই এই ঘোষণার দিকে তাকিয়ে ছিল। পেছন ফিরে তাকিয়ে যেটা দেখতে পাই যে, আমরা হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম। ভালোও করেছি, তবে সামনে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। টেস্ট ম্যাচ কবে শেষ হয়ে যাবে তা তো জানি না, তবে যে দিনটা পেয়েছি সেটা মনে রাখব। এই সুন্দর স্মৃতিটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

55m ago