সংক্রমণ বাড়ছে সম্মুখযোদ্ধাদের, কঠিন হয়ে উঠছে করোনা যুদ্ধ
প্রতিদিন নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। স্বাস্থ্য খাতের যোদ্ধাদের এমন সংক্রমণ কঠিন করে তুলছে মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জানিয়েছে, পাঁচ হাজারেরও বেশি চিকিৎসাকর্মী এরই মধ্যে করোনা পজিটিভ এবং গত রোববার পর্যন্ত ৬২ জন্য চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংক্রমিতদের মধ্যে চিকিৎসক এক হাজার ৭২৪ জন, নার্স এক হাজার ৩৫২ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মী রয়েছেন এক হাজার ৯২৫ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল সংখ্যক সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্য কর্মী সংক্রমিত হওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপে পরছে। কারণ, এমনিতেই দেশের বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার বিপরীতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মানুষ রয়েছেন কম।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) বলছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত আরও ১১ জন চিকিৎসক, যাদের বেশিরভাগই প্রবীণ, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
বিএমএ সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে নতুন করে শনাক্ত সংখ্যা কমলেও মোট আক্রান্তর সংখ্যা এখনও অনেক বেশি।’
অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে স্বাস্থ্য কর্মী সংক্রামিত হয়েছেন অনেক বেশি। এই হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বলে তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান।
রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট শনাক্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে তিন দশমিক শূন্য আট শতাংশ ছিলেন স্বাস্থ্য কর্মী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হার ইঙ্গিত দেয় যে অনেক স্বাস্থ্য কর্মীর এখনও পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নেই।
এহতেশামুল হক চৌধুরীর মতে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সরবরাহ করা দুর্বলমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং রোগীদের লক্ষণ গোপন করে চিকিৎসা নেওয়া।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালগুলোতে দেরিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর চিকিৎসকদের যথাযথ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছিল এবং এতে করে হ্রাস পেয়েছে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা।
দেশের কোনো হাসপাতালে সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীরা কিভাবে পিপিই ব্যবহার করবেন তা শেখানোর জন্য এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত ছিল।
গত মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বিএমএ বলেছে, চিকিৎসকদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়ী।
চিঠিটিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবী ও অন্যান্য পেশার সংক্রমিতদের চিকিত্সা ব্যবস্থা করার জন্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা করলেও সম্মুখযোদ্ধাদের চিকিত্সা নিশ্চিত করতে তারা তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিএমএ সংক্রামিত চিকিৎসকদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল বা অন্য কোনো হাসপাতাল ডেডিকেটেড করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিডিএফ-এর প্রধান প্রশাসক নিরুপম দাস জানান, যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই কেবল হাসপাতালে সংক্রমণ ঘটছে।
ভিকটিম কারা?
মারা যাওয়া ৬২ জন চিকিৎসকের মধ্যে অন্তত ৪২ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন অধ্যাপক বা অত্যন্ত অভিজ্ঞ। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন বলে মন্তব্য করেছেন এহতেশামুল হক চৌধুরী।
নিজেরা চিকিত্সা দেওয়ার পাশাপাশি তারা তরুণ চিকিৎসকদের দক্ষ চিকিত্সক হওয়ার জন্য গাইড করতে পারতেন। স্বাস্থ্য খাতে নীতি নির্ধারণেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারতেন বলে যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রবীণ চিকিৎসকদের অনেকেরই অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল। যার কারণে তাদের কোভিড-১৯ থেকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়।
তাদের মধ্যে ছয় থেকে সাতজন কাজ করতেন আইসিইউতে। ‘আমাদের দেশে কোনো হাসপাতালের নেগেটিভ পেশার রুম নেই। যার কারণে, আইসিইউতে সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকরা সংক্রমিত হন।’
এহতেশামুল হক চৌধুরী যোগ করেন, যেসব চিকিত্সা ইনটিউবেশন এবং নেবুলাইজেশনের সঙ্গে জড়িত তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
Comments