প্রস্থান, সেও নিজস্ব ধাঁচে

MS Dhoni
ফাইল ছবি: এএফপি (সম্পাদিত)

২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তাপস বৈশ্যর ছুঁড়ে দেওয়া বল ধরে স্টাম্প ভেঙ্গে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট। রান আউটে কাটা পড়ার আগে অভিষিক্ত মহেন্দ্র সিং ধোনি কেবল একটি বলই খেলতে পেরেছিলেন। এর ঠিক ৫ হাজার ৩১০ দিন পর ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যার্ফোডে মার্টিন গাপটিলের সরাসরি থ্রো ওই কিপার প্রান্তেই ইতি টানে ধোনির। শুরু আর শেষ, দুটিতেই রান আউটের কাকতাল। প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি যদিও সবই ভিন্ন। এই দুই রান আউটে মাঝে ধোনির সাফল্যে রাঙা ক্যারিয়ার, ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক, চাঁছাছোলা কথা, অধিনায়কত্বের নয়া দর্শন, ক্রিকেট নিয়ে একেবারেই ভিন্ন পথে ভাবা নাকি একদম পুরো চরিত্র হিসেবেই তাকে ধরা। ধোনিকে নিয়ে আলাপ করতে গেলে কোনটা বড় করবেন, তা নিয়েই দোলাচল দেখা দিতে পারে।

প্রয়োজনের বাইরে গণমাধ্যম একেবারে এড়িয়ে চলেন, সোশ্যাল মাধ্যমে নিভৃতচারী ধোনি বিদায়টা বললেন তেমন এক মাধ্যমেই। ইন্সটাগ্রামে সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে স্মৃতির সরণীতে হেঁটেছেন দেখতে নিরাবেগ ঝাড়খণ্ডের ছেলে। চট্টগ্রামের সেই রান আউট থেকে গত বিশ্বকাপে হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করা বিদায় রাগিণী, মাঝে বল আকাশে পাঠিয়ে ২০১১ বিশ্বকাপে জিতে নির্মোহ ভঙ্গি। সব ছবি জড়ো করে মিনিট চারেকের ভিডিওতে লাগিয়ে দিয়েছেন মুকেশের গান, ‘মে পাল দো পাল কা শায়ের হু,পাল দো পাল ম্যারি কাহানী হ্যা।’ বাংলায় যার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আমি দু’এক মুহূর্তের কবি, আমার গল্প কেবল দু’এক মুহূর্তের জন্যে।’

আসলেই কি তাই? ১৬ বছর ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির যা অবদান, বিশ্ব ক্রিকেটে ধোনির যা প্রভাব তা মোটেও দু’এক মুহূর্তের জন্য তো নয় নিশ্চয়ই।  এই গানের শেষ কথাতেও মিল পেয়ে যেন নিজের অনুভূতি জানাতে চেয়েছেন ধোনি,  ‘কাল হয়ত আরও কজন আসবে, যারা আমার চেয়ে আরও ভালো গান করবে, আরও ভালো গল্প বলবে। কাল হয়ত কেউ আমাকেও মনে রাখবে। কিন্তু এই ব্যস্ত দুনিয়ায় আমাকে মনে রেখে কেন অযথা সময় নষ্ট!।’

তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৫৩৮ ম্যাচে ১৭ হাজার ২৬৬ রান, ১৬ সেঞ্চুরি, ১০৮ ফিফটি, ৩৫৯ ছক্কা, কিপিংয়ে ৮২৯ ডিসমিসাল। ২০০ ম্যাচে অধিনায়ক ধোনির ৫৫ শতাংশ জয়। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়। ওয়ানডেতে পঞ্চাশের উপর গড় রেখে ১০ হাজার ছাড়িয়ে ক্যারিয়ার থামা।

হ্যাঁ, সময় সব কিছুতেই ধুলোর আস্তরণ জমিয়ে দেয়। তবু ধোনিকে মনে না রাখার উপায় কোথায়! পরিসংখ্যান আলো করতে আরও হয়ত অনেকেই আসবে। কিন্তু ঠিক ধোনির মতন চরিত্রের তো হরহামেশা দেখা পাওয়া দুষ্কর।

MS Dhoni

ধোনির জীবনের গল্পই এমন নাটকীয় তা নিয়ে সিনেমা না হয়ে উপায় ছিল না। রেলওয়ের ছোট চাকরিতে যার পথচলার শুরু। স্বপ্নটা বড় হওয়াতে, আর সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে যাওয়ার তাগিদ তীব্র হওয়াতে তার চলার পথে দেখা দিয়েছে বুলেট ট্রেন। পরে সাঁই সাঁই করে ছুটেছে তার স্বপ্নময় যাত্রা।

জীবনে জেতা এবং হারা- দুটো জিনিসই আছে। এর মাঝামাঝি কিছু নেই। ‘সম্মানজনক হার’ তকমা দিয়ে অহেতুক সান্ত্বনায় দ্বিমত জানিয়ে তাই একবার বলেছিলেন, ‘আপনি মরছেন তো আপনি মরছেনই, মরে যাওয়ার ভালো কোন উপায় থাকতে পারে না।’ যেকোনো কঠিন প্রশ্নের জবাবেও উত্তাপ স্থিমিত করে দিয়ে তার রসিকতার জুড়ি মেলাও ভার!

সবাই যখন গড়পড়তা হিসেব নিকেশে এগিয়েছে পথে, ধোনি তখন ভেবেছেন একেবারেই ভিন্ন। মানুষ শুরুতে বুঝেছে ‘ঝড়ে বক মরছে’, ওসব ‘ফাটকা’ আর কতইবা  হবে। কিন্তু যখন অহরহ ‘আউট অব দ্য বক্স’ ভেবে এনেছেন সাফল্য। তখন তলিয়ে দেখতে গিয়ে মিলেছে আসলে নির্ভেজাল ক্রিকেটীয় গভীরতা। লম্বা চুল ঝাঁকিয়ে হরদম বল পেটাতে দেখে শুরুতে মনে হতো উড়নচণ্ডী কোন অস্থির যুবকই হবেন। নেতৃত্বের ঝাণ্ডা হাতে নেওয়ার  পরে আবিষ্কার; বরফ শীতল এক মাথা, যা পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারে নানান উপায়ে।

MS Dhoni

রান আউট নয়। ধোনি আসলে শেষ পর্যন্ত ‘নট আউট’ থেকে গেলেন। খেলার ধরনে যে ভিন্ন স্টাইল নিয়ে এসেছিলেন, বিদায় বলার ধরনেও সেই স্টাইল দিয়ে জানিয়ে গেলেন যেন, ‘আমি একটু ভিন্ন ধাঁচের, সচরাচর যার দেখা মেলে না।’

 

Comments

The Daily Star  | English

Bridge this year, full benefits not before 2030

The Bangabandhu Railway Bridge over the Jamuna is set to be inaugurated next month, but people will not get the full benefit of it until at least 2030.

6h ago