হুমায়ূন আহমেদ কখনো জন্মদিন উদযাপন করতে চাইতেন না

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। দেশের কোনও লেখক এখনো তার জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। নাট্যকার হিসেবেও তার মতো জনপ্রিয় কেউ ছিলেন না। চার দশক আগে লেখা তার টেলিভিশন নাটকগুলো এখনো দর্শকদের আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও সফল তিনি। নিভৃতে ছবিও আঁকতেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সাদাত

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। দেশের কোনও লেখক এখনো তার জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। নাট্যকার হিসেবেও তার মতো জনপ্রিয় কেউ ছিলেন না। চার দশক আগে লেখা তার টেলিভিশন নাটকগুলো এখনো দর্শকদের আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও সফল তিনি। নিভৃতে ছবিও আঁকতেন হুমায়ূন আহমেদ।

হাতের মুঠোয় সাফল্য বন্দি করে আনা কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মদিন আজ ১৩ নভেম্বর।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আসলে কিভাবে কাটত? তিনি কি জন্মদিন উদযাপন করতে চাইতেন? জন্মদিনে তিনি কী করতে পছন্দ করতেন? পাঠক, আসুন জানা যাক সেসব কথা।

জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদের ৫০তম জন্মদিনটি ছিল সবচেয়ে স্মরণীয়। সেদিন দিনভর জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয়েছিল রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে। এর আগে কখনো জনসম্মুখে নন্দিত এই লেখকের জন্মদিন উদযাপন করা হয়নি।

তার ৫০তম জন্মদিনকে ঘিরে লেডিস ক্লাবের মাঠটি সাজানো হয়েছিল। সেদিন সকাল থেকে হুমায়ুন আহমেদের একক বইমেলার আয়োজন ছিল। মূলত হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশকরা প্রিয় লেখকের জন্মদিনে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

লেডিস ক্লাবে সেদিন ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমার প্রদর্শনী হয়েছিল। এছাড়াও, সন্ধ্যায় একটি নাটিকা মঞ্চস্থ হয়েছিল। তাতে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর ও আফসানা মিমি। পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলেন প্রকাশক ফরিদ আহমেদ।

সেটি ছিল ১৯৯৮ সালের ঘটনা।

সে দিনের সেই স্মৃতি স্মরণ করে হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মদিনের প্রাক্কালে প্রকাশক ফরিদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ কখনো জনসম্মুখে জন্মদিন পালন করতে চাইতেন না। তিনি নির্জনতা পছন্দ করতেন। আমরা ঘরোয়াভাবে তার জন্মদিন উদযাপন করতাম। তার ৫০তম জন্মদিন ছিল বলেই সেই দিনটিকে স্মরণীয় করতে আমরা প্রকাশকরা তাকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলাম।’

হুমায়ূন আহমেদের ৬০তম জন্মদিনটিও ছিল মনে রাখার মতো। শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে জমকালোভাবে বইমেলা ও জন্মদিনের উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল। তা উদ্বোধন করেছিলেন লেখকের মা আয়েশা ফয়েজ।

হুমায়ূনের ৬০তম জন্মদিনে ম্যাজিক মুন্সি নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

তার ৬১তম জন্মদিনেও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল পাবলিক লাইব্রেরিতে। মেলার উদ্বোধন করেছিলেন স্বনামধন্য লেখক রাবেয়া খাতুন। কাঠপেন্সিল নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল সেই জন্মদিনে।

প্রখ্যাত এই লেখকের মারা যাওয়ার আগে শেষ জন্মদিনটিও ছিল বেশ মনে রাখার মতো। সেদিন তার পরিবারের সদস্যরা ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’ বাসায় একত্রিত হয়েছিলেন। তার মা ছিলেন সেখানে। নেত্রকোনার কুতুবপুর গ্রাম থেকে তার একমাত্র জীবিত চাচা এসেছিলেন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন প্রতিনিয়ত লেখার একজন লেখক। জন্মদিনে তিনি নতুন কিছু লিখতেনই। এ বিষয়ে এক জন্মদিনে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘লেখালেখিই তো আমার বিশ্রাম। আমি মৃত্যু পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে যাব।’

তাকে ঘিরে জন্মদিন পালন করার বিষয়ে তিনি সব সময় বলতেন, ‘নিজের জন্মদিনটি আমার হাতে নেই। এটা প্রকাশক ও আমার পরিবারের হাতে চলে গেছে। আমি আসলে জন্মদিন উদযাপন করতে চাই না। যা হচ্ছে তা সবার পছন্দে হচ্ছে।’

জন্মদিনে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করলেও অন্যরা আনন্দ করুক এটা চাইতেন হুমায়ুন আহমেদ। তাই পরিচিতরা দেখা করতে এলে কখনো বিরক্ত হতেন না। যারা দেখা করতে বা শুভেচ্ছা জানাতে আসতেন তাদের মিষ্টি মুখ করিয়ে বই উপহার দিতেন।

জন্মদিনে তিনি কখনো কখনো নুহাশপল্লীতে চলে যেতেন। সেখানে গানের আসর বসাতেন। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে চলত তার আনন্দ-আড্ডা।

হুমায়ূনবিহীন ৭২তম জন্মদিন আজ। কথার জাদুকর নেই। কিন্তু, তার অসংখ্য গল্প-উপন্যাস, চলচ্চিত্র, নাটক রয়ে গেছে। তা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে পাঠকদের হৃদয়ে।

আজকের দিনে তার প্রকাশক ও ভক্তরা একক ও সাংগঠনিকভাবে উদযাপন করবেন হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন।

Comments

The Daily Star  | English

Don’t stop till the job is done

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday urged key organisers of the student-led mass uprising to continue their efforts to make students’ and the people’s dream of a new Bangladesh come true.

3h ago