‘আমি ওই নারীর ধূমপান দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম’

রাজশাহী সার্কিট হাউস রোডের সামনে গতকাল রোববার সকালে এক নারীর ধূমপানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রতীকি ছবি

রাজশাহী সার্কিট হাউস রোডের সামনে গতকাল রোববার সকালে এক নারীর ধূমপানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

যেখানে দেখা যায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এক ব্যক্তি ওই নারীকে উদ্দেশ্য করে তীব্র চিৎকার ও তিরস্কার করছেন। ধমক দিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন। সেখানে ওই নারীকে হেনস্তা ও তিরস্কার করতে আরও অনেককে এগিয়ে আসতেও দেখা যায়।

সেখানে উপস্থিত অনেক পুরুষের হাতে সিগারেট থাকলেও তাকে কেন এভাবে বলা হচ্ছে জানতে চান ওই নারী। যুক্তিতে না পেরে আরও রেগে উঠতে দেখা যায় তাদের। ভিডিওতে দেখা যায় সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন ওই নারী। চলে যাওয়ার সময় সময় শুনতে পান, ‘এই ধরনের আচরণের জন্য ধর্ষণ হয়।’

তবে ভিডিওতে দেখা যায় একজন তরুণ ওই নারীর পক্ষে কথা বলছেন। একজন ছেলে ধূমপান করতে পারলে একজন নারী কেন পারবে না জানতে চান তিনি। তাকেও তীব্র তিরস্কারের শিকার হতে হয়।

ওই নারীকে ধূমপানের কারণে যিনি ধমকেছিলেন এবং এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন আজ সোমবার তার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে। শহীদ হোসেন বারেক শহরের রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তার ধূমপান দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পিডব্লিউডি ঠিকাদাররা ওখানে বসে থাকি। আমি তার ধূমপান দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম, মনে করলাম এতে এলাকার পরিবেশ খারাপ হচ্ছে।’

তিনি দাবি করেন, তিনি ওই নারীকে লাঞ্ছিত করেননি। বিনীতভাবে ওই নারীকে সিগারেট ফেলে দিয়ে চলে যেতে বলেছিলেন।

তিনি আরও দাবি করেন, ওই নারী রেগে যাওয়ায় এবং প্রতিক্রিয়া দেখানোয় পরিস্থিতি খারাপ হয়।

রাজশাহীর নারী মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি অগ্রহণযোগ্য। সেইসঙ্গে তারা জানান, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং, গত কয়েক বছরে এ ধরনের ঘটনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ঘটছে।

তারা জানান, ‘সামাজিক রীতি’ মানার কথা বলে নিয়মিতভাবে নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ বলেন, ‘আগে নারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, ধীরে ধীরে উপশহর, সাহেব বাজার এবং লক্ষ্মীপুর এলাকায়ও এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ আসছে।’

‘এই রকম পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক প্রশ্রয়েই এটা বাড়ছে,’ যোগ করেন তিনি।

নভেম্বরের গোঁড়ার দিকে রাজশাহীর রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলনী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনিরা মিঠি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, মাথায় কাপড় না দেওয়ার কারণে কয়েকজন নারী তাকে জনসমক্ষে লাঞ্ছিত করেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত দুই বছরে তিন বার তিনি এভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এর দুটি ঘটনা ঘটেছে উপশহর এলাকায়, অন্যটি সাহেব বাজারে।

‘আমি বেশ কয়েক দশক ধরে রাজশাহী শহরে বসবাস করছি। সাম্প্রতিক সময়ের নারী লাঞ্ছনার ঘটনাগুলো আমার কাছে একেবারেই নতুন,’ বলেন তিনি।

উদাহরণ হিসেবে তিনি তার সর্বশেষ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি উপশহর নিউ মার্কেটে বাজার করছিলেন। শাক-সবজি কেনার সময় তিনি লক্ষ্য করলেন কয়েকজন নারী তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন।

তাদের মধ্যে একজন তার কাছে জানতে চান যে তিনি হিন্দু কিনা।

তিনি ‘মানুষ’ বলে জবাব দিলে তাদের একজন তাকে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মাথায় কাপড় না দেওয়ায় তাকে তিরস্কার করে চলে যান।

মিঠির সেই ফেসবুক পোস্টে ৮৮ জন মন্তব্য করেছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী। তাদের অনেকেই গত দুই তিন বছরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজেদের লাঞ্ছিত হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

মন্তব্যে মিতালী সরকার নামে একজন লেখেন, সাহেব বাজারে কেনাকাটা করার সময় তিনি ও তার মা একইরকম লাঞ্ছনার মুখোমুখি হয়েছেন কয়েকবার।

নিবেদিতা চ্যাটার্জী নামের একজন লেখেন, হিন্দু রীতিতে তিনি শাঁখা পরে থাকলেও, তারও একই রকম অভিজ্ঞতা আছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ জাতীয় ঘটনা কখনও কেউ পুলিশকে জানায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা দেশের আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগ পুলিশকে জানালে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago