চেন্নাই থেকে ফিরে ঢাকার হাসপাতালে আবদুল কাদের

অভিনেতা আবদুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের চেন্নাই থেকে গতকাল রোববার দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের। দেশে ফেরার পর তাকে ভর্তি করা হয়েছে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন আবদুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বাবাকে নিয়ে এয়ারপোর্টে নেমেছি। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স রাখা ছিল। সরাসরি আমরা হাসপাতালে চলে আসি।’

আবদুল কাদেরের সবশেষ অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘বাবার অবস্থা কিছুটা ভালো। খুব বেশি ভালো তা বলব না, কিন্তু কিছুটা ভালো। তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরের পর তার অবস্থার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে। একটাই অনুরোধ, সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন।’

গত ৮ ডিসেম্বর আবদুল কাদেরকে ভারতের চেন্নাইয়ের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর আগে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তার পুরো শরীর সিটি স্ক্যান করানোর পর টিউমার ধরা পড়ে।

টিউমার ধরা পড়ার পর দ্রুত পারিবারিকভাবে ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ক্যান্সার তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।

তার শরীরের এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে কেমো দেওয়ার অবস্থায় ছিল না। এরপর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।

টেলিভিশন দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় মুখ আবদুল কাদের। একটা সময়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নিয়মিত দেখা যেত তাকে। প্রচুর টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে। বদি ছিলেন বাকের ভাইয়ের সহচর। বদির মিথ্যা সাক্ষীর কারণেই বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়েছিল। এজন্যই বদি চরিত্রটি এবং আবদুল কাদের আলোচিত হন।

আবদুল কাদের অভিনীত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে- মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, সবুজ সাথী, শীর্ষবিন্দু, আগুণ লাগা সন্ধ্যা, তিন টেক্কা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, সবুজ ছায়া, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, সুন্দরপুর কতদূর, আমাদের ছোট নদী, দূরের আকাশ, হারানো সুর, যুবরাজ, এই সেই কণ্ঠস্বর, বহুরূপী, একজনমে, জল পড়ে পাতা নড়ে, লোভ ইত্যাদি।

এছাড়াও ‘রং নম্বর’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

আবদুল কাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ি থানার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয় দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই বেশ জোড়ালোভাবে নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে যান তিনি।

১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেন আবদুল কাদের। পরের বছর থেকে বেতারেও অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘এসো গল্পের দেশে’ ধারাবাহিক নাটকে।

মঞ্চ নাটকের দল ‘থিয়েটার’ এর সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন কয়েক দশক। থিয়েটারের ৩০টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

মঞ্চে তার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে- পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, মেরাজ ফকিরের মা, দুই বোন, এখনও ক্রীতদাস ইত্যাদি।

তিনি টেনাসিনাস (বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যকার ও নাট্যশিল্পীদের একমাত্র সংগঠন) এর সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

আশির দশক থেকে অভিনয়ের পাশাপাশি চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন আবদুল কাদের। অনেক বছর তিনি বাটা সু কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। এ পেশায়ও তিনি সফল একজন মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

PR system a threat to democracy: Rizvi

Under the PR system, the party, not the people, will choose MPs, he says

47m ago