কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন মহাসড়ক আইন

অনুমোদন ছাড়া মহাসড়কে বাজার, মার্কেট বা যেকোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

অনুমোদন ছাড়া মহাসড়কে বাজার, মার্কেট বা যেকোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এমনই বলা হয়েছে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত মহাসড়ক আইন-২০২০’র খসড়ায়। মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ সময়োপযোগী করা এবং যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ খসড়া আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর অধীনে সরকারি বা বেসরকারি ইউটিলিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারবে না। অন্যথায় তারাও একই শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে।

নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি নির্দিষ্ট লেন ছাড়া রাস্তায় ধীর গতির গাড়ি চালনা করেন কিংবা ন্যূনতম গতি তুলতে সক্ষম নয় এমন গাড়ি চালনা করেন, তবে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে।

এই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে প্রায় শতবর্ষ পুরনো মহাসড়ক আইন-১৯২৫’র পরিবর্তে নতুন আইন প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

নতুন আইন কেন?

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এই আইনের খসড়াটি তৈরি করে এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠায়।

নতুন আইনের খসড়া তৈরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন, মহাসড়ক সম্পর্কিত নতুন বিভিন্ন বিষয় এতে যোগ করা হয়েছে, এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কের অনেক ‘ইস্যু’ বর্তমান আইনের আওতায় আসে না বলে জানান তারা।

বর্তমান আইনে মাত্র পাঁচটি ধারা রয়েছে— শিরোনাম, ব্যাপ্তি ও প্রারম্ভিককরণ, সংজ্ঞা, সরকারি রাস্তাগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ এবং নিয়ম করার ক্ষমতা ও জরিমানা। নতুন আইনে ধারা থাকবে ২০টি।

মহাসড়ক আইন-১৯২৫ অনুসারে, সব ‘সরকারি রাস্তা’ গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) অধীনে। কিন্তু, বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। কয়েক দশক ধরেই রাস্তাগুলো সওজের অধীনে রয়েছে।

১৯২৫ সাল থেকে শুরু করে মহাসড়কের সংখ্যা এবং ব্যবহারও বেড়েছে। অপরদিকে এক্সপ্রেসওয়ে এবং নিয়ন্ত্রিত হাইওয়ে, টোল রোডের মতো অনেক উন্নয়ন সড়ক এ খাতে যুক্ত হয়েছে।

সওজের ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিভাগের অধীনে রয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৩৬১ কিলোমিটার রাস্তা। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৪৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৮২ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৩৬ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশের ২২টি হাইওয়েতে মোটরবিহীন যানবাহন চলাচল করে চলেছে। এ ছাড়াও, রাস্তাগুলোতে দ্রুত এবং ধীর গতির যানবাহন একইসঙ্গে চলাচল করা সাধারণ বিষয়।

এই বছরের জুলাই পর্যন্ত সারা দেশের সড়ক এবং মহাসড়কে বা এগুলোর পাশে অন্তত ১৬ হাজার ৫০৫টি অবৈধ কাঠামো ছিল। সওজের তথ্য অনুযায়ী, তাদের এক লাখ ৪৮ হাজার ১৮১ দশমিক ৬৮ একর জমি অবৈধ দখলে ছিল।

এই ধীরগতির যানবাহন এবং অবৈধ কাঠামোগুলোকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়। এসব দুর্ঘটনায় প্রতিবছর হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়।

খসড়া আইনের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে।

অন্যান্য ধারা

খসড়া আইন অনুসারে, সরকার যেকোনো সড়ককে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে মহাসড়ক, নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণা করতে পারবে।

এ ছাড়াও, খসড়া আইন অনুযায়ী, সওজ থেকে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো সড়ক বা মহাসড়ক নিয়ন্ত্রিত হাইওয়েতে সংযুক্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে সওজ নকশা অনুমোদন দেওয়ার পরে মোড়, ইন্টারচেঞ্জ ও মার্জ লেনগুলো তৈরি করা যেতে পারে।

সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সেবা সরবরাহকারীদের মহাসড়কের পাশে লাইন স্থাপনের পূর্বে অনুমোদন নিতে হবে এবং এর জন্য চার্জ দিতে হবে।

মহাসড়ক উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে নিজ ব্যয়ে তাদের স্থাপনা স্থানান্তর করতে হবে বলেও এতে বলা হয়েছে।

বিভাগটি এমন কোনো ইউটিলিটি পরিষেবা না দেওয়ার অনুমতি দেবে যাতে কর্তৃপক্ষ সাধারণ পরিবহন পরিষেবাগুলোতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সওজের অনুমোদন ছাড়া যেকোনো অবকাঠামো স্থাপনকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ ধরনের অপরাধে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী দণ্ড প্রদান করা হবে।

এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

মহাসড়কে ক্ষতিকারক উপাদান ছড়িয়ে দেয় এমন মোটরগাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। অন্যথায় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

মহাসড়কে ফসল, খড় বা অনুরূপ উপকরণ শুকানোর জন্য রাখা হলে বা অনির্ধারিত জায়গা দিয়ে চলাচল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। অনুমোদন ছাড়া ঝুলন্ত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা তোরণ নির্মাণ করা হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

এসব অপরাধ সংঘটিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড প্রদান করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago