ঢাকাই সিনেমার ‘ফার্স্ট লেডি’ সুমিতা দেবীর জন্মদিন আজ

ঢাকাই সিনেমার ‘ফার্স্ট লেডি’ বলা হতো তাকে। ঢাকার চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকও ছিলেন।
Sumita Debi
সুমিতা দেবী (১৯৩৬ - ২০০৪)। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার ‘ফার্স্ট লেডি’ বলা হতো তাকে। ঢাকার চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকও ছিলেন।

যার কথা বলা হচ্ছে তিনি সুমিতা দেবী। এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে সুমিতা দেবী নাম রয়েছে অগ্রগণ্যদের তালিকায়।

সুমিতা দেবী নামটি দিয়েছিলেন ফতেহ লোহানী। তার পারিবারিক নাম ছিল হেনা ভট্টাচার্য।

‘আসিয়া’ ছিল সুমিতার প্রথম সিনেমা। এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম আলোচিত একটি সিনেমা। এই রুরাল ট্রাজেডি সিনেমায় সুমিতার নায়ক ছিলেন শহীদ। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন ফতেহ লোহানী।

‘আসিয়া’ সেই সময়ে সেরা সিনেমা হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদক পেয়েছিল। অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন নিগার পুরস্কার।

অবশ্য মুক্তির দিক থেকে সুমিতা দেবী অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল ‘আকাশ আর মাটি’। এটিও ফতেহ লোহানী পরিচালনা করেছিলেন। এই সিনেমায় তার নায়ক ছিলেন আমিন ও প্রবীর কুমার। ১৯৫৯ সালের ২৪ জুলাই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল।

এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ সুমিতা দেবীর অভিনয় ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি আলোচিত চলচ্চিত্র। এতে তার নায়ক ছিলেন আনিস। এই সিনেমার একটি গান সে সময়ে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি হলো— ‘নয়নে লাগল যে রঙ আহা তা কেউ জানল না।’

‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমার সহকারী পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। এই সিনেমাটিতে অভিনয় করতে গিয়ে জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সুমিতার। পরে তারা বিয়ে করেছিলেন।

ঢাকাই সিনেমার পাশাপশি সুমিতা দেবী বেশ কয়েকটি উর্দু সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন। উর্দু সিনেমার জন্য সেসময় তিনি লাহোরে চলে যান। তার অভিনীত প্রথম উর্দু সিনেমা ছিল ‘ধুপছাঁও’।

কিন্তু, সুমিতার অভিনয় জীবনের আলোচিত উর্দু সিনেমা হচ্ছে ‘সংগম’। এ সিনেমায় সুমিতার নায়ক ছিলেন খলিল। এর পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান।

জহির রায়হান পরিচালিত ‘কখনো আসেনি’ ও ‘কাঁচের দেয়াল’ সুমিতা অভিনীত দুটি আলোচিত সিনেমা। ‘কাঁচের  দেয়াল’ এ তার নায়ক ছিলেন আনোয়ার হোসেন। ‘কখনো আসেনি’তে নায়ক ছিলেন আনিস।

‘সোনার কাজল’-ও সুমিতার অভিনয় জীবনের আরেকটি আলোচিত সিনেমা। সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান ও কলিম শরাফী।

প্রযোজক হিসেবেও নাম লিখিয়েছিলেন সুমিতা। তার প্রযোজিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘আদর্শ ছাপখানা’, ‘মায়ার সংসার’, ‘নতুন প্রভাত’ ও ‘আগুন নিয়ে খেলা’।

সুমিতা দেবী ৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন প্রধান চরিত্রে। এছাড়া, পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী ছিনেন শতাধিক সিনেমায়।

১৯৬২ সালে অল পাকিস্তান ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন সুমিতা দেবী।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সুমিতা দেবী। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শিল্পীদের সঙ্গে নাটক করতেন তিনি। সেসব নাটক থেকে আসা টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে জমা দিতেন।

কলকাতার রাজপথে, বিভিন্ন হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন তিনি।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নানা অনুষ্ঠানেও তার ছিল সরব পদচারণা।

সুমিতা দেবী ১৯৩৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি মারা যান। তাকে মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago