ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে: টোল আদায় শুরু হতে পারে জুলাইয়ে

আগামী জুলাই থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু করতে পারে সড়ক কর্তৃপক্ষ।
Expressway
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। স্টার ফাইল ফটো/ পলাশ খান

আগামী জুলাই থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু করতে পারে সড়ক কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন সভায় অংশ নেওয়া চার সদস্য।

এর পাশাপাশি উক্ত সভায় এই এক্সপ্রেসওয়ের টোল হার নির্ধারণে গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত টোলের হার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গ্রহণ করেছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

প্রস্তাব অনুযায়ী দুই অ্যাক্সেলের একটি ট্রাকের ভিত্তি টোল হতে পারে কিলোমিটার প্রতি ৯ দশমিক ৯ টাকা। এর ফলে ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করলে একটি ট্রাককে টোল দিতে হবে ৫৪৪ টাকা।

প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি বাসের জন্যে টোল ধরা হতে পারে ৪৯০ টাকা ও (সেডান) গাড়ির টোল হতে পারে ১৩৬ টাকা। দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়েতে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্যে চারটি পথ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়ের যে গাড়ি যে জায়গা থেকে বের হবে সে অনুযায়ী গাড়ির টোল নেওয়া হবে।

২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) পূর্বে যে টোল প্রস্তাব করেছিল নতুন এ টোলের হার তার অর্ধেক।

বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘অন্তর্বতী সময়ের জন্যে টোলের এই হার ধার্য করা হয়েছে। পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার পর টোলের হার আবার ধার্য করা হবে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পদ্মাসেতু যান চলাচলের জন্যে খুলে দেওয়া হলে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায় শুরু করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও পদ্মাসেতু পার হওয়ার জন্যে আলাদা টোল দিতে হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতু যান চলাচলের জন্যে খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো এর টোল হার নির্ধারণ করা হয়নি।

টোলের রাস্তা

সওজ বর্তমানে ৫০ কিলোমিটার দুই লেনের হাতিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার চট্টগ্রাম বন্দর অ্যাকসেস রোড ও ৭৪ কিলোমিটার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জগদীশপুর-শেরপুর) থেকে টোল আদায় করছে।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে জাতীয় মহাসড়ক থেকে দূরগামী যানবাহন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টোল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত বছর মার্চে ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর এই উদ্যোগ আবার নতুন করে সামনে আসে।

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের পর কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে চার-লেন বা এর বেশি লেনের অন্যান্য জাতীয় মহাসড়ক থেকে টোল আদায় শুরু করবে।

প্রস্তাবিত টোলের হার

গত ৩ জানুয়ারি স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে টোলের হার প্রস্তাব করেছিল সওজ।

যদিও ২০১৪ সালের টোল নীতিমালাতে এক্সপ্রেসওয়ের কথা উল্লেখ নেই তবুও সওজ একে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক’ হিসেবে বিবেচনা করে টোল হার নির্ধারণ করেছিল।

তিনটি সেতু ও ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে একটি মাঝারিমাপের ট্রাকের জন্যে ভিত্তি টোল প্রস্তাব করা হয়েছিল কিলোমিটার প্রতি ২০ দশমিক ১৮ টাকা। এর ফলে একটি ট্রাককে পুরো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে টোল দিতে হতো ১ হাজার ১১০ টাকা।

কিন্তু, স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে একে ‘অনেক বেশি’ বলে মনে করায় টোল হার পুননির্ধারণের জন্যে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

গত ১৪ জানুয়ারির সভায় কমিটি তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিল পদ্মাসেতু খুলে না দেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বতী টোল হার নির্ধারণ করা এবং পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর টোল হার পুননির্ধারণ করা।

যেহেতু টোল নীতিমালায় এক্সপ্রেসওয়ের কথা উল্লেখ নেই তাই একে জাতীয় মহাসড়ক হিসেবে গণ্য করে কিলোমিটার প্রতি ভিত্তি টোল দেড় টাকা হিসাবে টোল আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কমিটি।

বর্তমানে টোল নীতিমালা ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ের তিনটি বড় সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে এবং সেতু তিনটি পার হতে একটি মাঝারিমাপের ট্রাককে বর্তমানে ৪৬০ টাকা দিতে হচ্ছে।

কমিটির মত ছিল বর্তমানে এই তিনটি সেতুর জন্যে যে হারে টোল নেওয়া হচ্ছে সেটি বহাল রেখে বাকি এক্সপ্রেসওয়ের জন্যে টোল নীতিমালা অনুযায়ী টোল হার নির্ধারণ করা।

কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেছেন, টোল নিয়ে আগে তাদের কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেগুলো নিয়ে গতকালকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, আগামী জুলাই থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

টোল আদায় শুরু হলে সেই এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গণপরিবহনের জন্যে আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

কমিটির অপর সদস্য ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হলে যাত্রীদের কাছ থেকে যেন অযৌক্তিক হারে ভাড়া না নেওয়া হয় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka luxury hotels see decline in clients

Luxury hotels fall silent as business travellers fade away

Luxury hotels in Dhaka are yet to resume normal business activities as foreign and local clients do not feel confident in travelling to the country given that the overall situation is still unstable.

17h ago