পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা আরও বাড়তে পারে

বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং এতে করে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমার ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং এতে করে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমার ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

তারা জানান, সেতুর দুপাশে রেলওয়ের জন্য নির্মানাধীন ভায়াডাক্টের নকশায় পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারি, বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্ত ও জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কার্যপরিধি পরিবর্তনই বড় চ্যালেঞ্জ।

গতকাল মঙ্গলবার রেল ভবনে আয়োজিত এক সভায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়। রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান চারটি বড় প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে সভাটি আহ্বান করা হয়।

সভার সভাপতি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে শোনেন এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান সভায় অংশগ্রহণকারীরা।

নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ১৬৯ কিলোমিটার রেল লাইনের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে যশোরের রেল সংযোগ তৈরি করতে এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০১৬ সালের মার্চে। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয় ৩৪ কোটি ৯৮৯ কোটি টাকা।

তবে প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। মূলত, চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার কারণেই কাজ শুরু করতে দেরি হয়।

এরই মধ্যে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ২৪৬ কোটি টাকায়। বাড়ানো হয় কাজ শেষ করার সময়সীমাও। দুই বছর বাড়িয়ে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

সেতুর দুপাশে ভায়াডাক্টের নকশায় সমস্যার কারণে শুরুতেই রেলপথটি নির্মাণে সমস্যায় পরেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং কাজে লাগাতে না পারায় গত দুই অর্থবছরে বরাদ্দকৃত বিশাল পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।

অন্যান্য সব প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পটিও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছরের শুরুর দিকে বাধার মুখে পড়ে।

গতকালের সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পের একটি এক নথি থেকে জানা যায়, কোভিড সংকটের সময় কাজ বন্ধ না থাকলেও কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই, পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এখানেই সমস্যার শেষ নয়।

গত বছরের জুলাইয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সেতুর দুপাশে রেলপথের ভায়াডাক্টগুলোর দুটি পয়েন্টে উচ্চতা ও প্রস্থ বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সভায় জানায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জিওমেট্রিক ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ওয়ান ওয়ে টু লেন সড়কের জন্য নুন্যতম ১০ দশমিক এক মিটার প্রয়োজন হলেও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের চাহিদানুযায়ী ১৫ দশমিক পাঁচ মিটার হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স রাখার জন্য জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে রেল-রোড ক্রসিং পয়েন্টে ভায়াডাক্টের নকশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে মাওয়া-ভাংগা অংশে রেলওয়ে ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের মেয়াদ বিলম্বিত ও ব্যয় বৃদ্ধি হবে বলে প্রতীয়মান হয়।

এসব সমস্যার কারণে কাজ শেষ করতে আরও কতটা সময় প্রয়োজন হবে এবং খরচ কতটা বাড়তে পারে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঠিকাদার এর পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে। কাজেই এখনই এটা বলা সম্ভব না।’

তিনি অবশ্য জানান, নকশাকেন্দ্রিক যে জটিলতা ছিল তার সমাধান করা হয়েছে।

আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রযেছে। একই সঙ্গে রেল প্রকল্পটির মাওয়া থেকে ভাংগা অংশও খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। সামগ্রিক প্রকল্পে দেরি হতে পারে, তবে আমরা (ভাঙ্গা-মাওয়া) সেকশনের যে দেরি সেটি পুষিয়ে নিতে পারব।’

প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ হলেও এই অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পরিবর্তিত কার্যপরিধি অনুযায়ী চলমান ও ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কাঠামোর নকশার পরিবর্তনকে দেখছে আরও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে। এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্ত ও জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কার্যপরিধি পরিবর্তিত হচ্ছে, যা প্রকল্প ব্যয় ও নির্মানকালকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

অন্যান্য প্রকল্পের সমস্যা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আগামী অর্থবছরের জন্য এক হাজার ২৯১ কোটি টাকা চেয়েছে। তবে রেলওয়ের পরিকল্পনা সেল ৫৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

তবে পুরো টাকাই প্রয়োজন বলে জানান তারা। অন্যথায় ঠিকাদারদের পাওনা এবং আমদানি করা পণ্য ছাড় করা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়। এসব সমস্যার সম্মুখীন হলে প্রকল্পের ব্যয় এবং সময়সীমা বেড়ে যেতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

যমুনা নদীর ওপর চার দশমিক আট কিলোমিটার রেলসেতু নির্মাণের জন্য গত বছরের আগস্ট মাসে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই রুটে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পুরোপুরি স্থানান্তরিত না হওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

তারা আরও জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করতে না পারায় বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছেন।

১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আখাউড়া এবং লাকসামের মধ্যে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটিও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ছয় হাজার ৫০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago