করোনায় মারা গেছেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা নমিতা ঘোষ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রথম নারী শব্দসৈনিক নমিতা ঘোষ। রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রথম নারী কণ্ঠশিল্পী নমিতা ঘোষকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তার ভাগ্যে জোটেনি একুশে পদক কিংবা শিল্পকলার পদক। অথচ তার কত বড় অবদান দেশের জন্য। আজ তিনি চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন।’
১৯৭১ সালে নমিতা ঘোষের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। সেই সময়েই কণ্ঠ দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রথম নারী কণ্ঠযোদ্ধা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নমিতা ঘোষ অনেকদিন ধরেই অসুখে ভুগছিলেন। ক্যানসার ও চোখের সমস্যা ছিল তার। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ নমিতা ঘোষ বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি গানে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর থেকেই একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে রাজধানীর আজগরিয়া হাসপাতালে এবং সেখান থেকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল বলেও পরিবার জানিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সেখানেই তিনি মারা গেলেন।
১৯৫৮ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার শাঁখারিবাজারে জন্মগ্রহণ করেন নমিতা ঘোষ। পড়াশোনা করেছেন জগন্নাথ কলেজ থেকে। ১৯৭০ সালে প্রথম তিনি বেতারের শিল্পী হন। ১৯৭১ সালের ২৯ মে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ১৪ বছর বয়সে ঢাকা থেকে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে কেরানীগঞ্জে যান নমিতা ঘোষ। সেখান থেকে চলে যান কুমিল্লা। এরপর পৌঁছে যান আগরতলায়। আগরতলায় গিয়ে পরিচিত হন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। ওই সময়ে আগরতলায় একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজ চলছিল। সেখানে নমিতা ঘোষ অংশ নেন। আগরতলা থেকে তিনি চলে যান কলকাতায়। সেখানে যাওয়ার পর যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারে। তিনিই স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রথম নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
নমিতা ঘোষের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছে তার পরিবার।
Comments