অপ্রাপ্তির মেলায় বিদায়ের সুর
করোনার বিধিনিষেধ, হরতাল ও গণপরিবহণ বন্ধ এসবের মাঝেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের বাংলা একাডেমি বইমেলা। একুশের চেতনায় প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা শুরু হলেও মহামারির কারণে এবার হয়েছে মার্চে। যে বইমেলাতে থাকত শীতের আবহ, সেখানে এবার ছিল অসহনীয় গরম। সবকিছু মিলিয়ে এবারের বইমেলা জমে ওঠেনি। আজ ছিল মেলার শেষ দিন। তাই দুপুরের পর থেকেই মেলায় ছিল বিদায়ের সুর।
মেলার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও স্টল ছাড়া বাকিগুলোতে ক্রেতা-পাঠকের ভিড় ছিল না। বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্র থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল আজই মেলার শেষ দিন। তবে, আজ অফিস থাকায় মেলায় মানুষের তেমন সমাগম ছিল না। গতকাল একই চিত্র ছিল মেলার। কিছু কিছু প্রকাশনাকে আগেভাগেই বই সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
টাঙ্গন প্রকাশের অজয় রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেলার বিক্রি খুব বাজে অবস্থা। অলসভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়। তাই যত দ্রুত যেতে পারি ততই ভালো মনে হচ্ছে।’
ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্মৃতি বিজড়িত প্রকাশনা জাগৃতির দায়িত্বে থাকা রাজিয়া রহমান জলি বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সেই পরিমাণটা এখন বলতে পারছি না। আমি বলব- সরকার নানা ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেন, প্রণোদনা দেন- প্রকাশনা শিল্পকেও বাঁচাতে সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এজন্য আমরা গতকাল কাটাবন প্রকাশনা ফোরাম থেকে একটি আবেদনও করেছি।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি এক খোলা চিঠিতে লেখেন, ‘এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তাতে লাভের চেয়ে প্রকাশকদের ক্ষতিই হয়েছে বেশি। কোভিডের প্রথম আঘাতেই এদেশের অনেক প্রকাশক তাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। অনেকগুলো অভিজাত বইয়ের দোকানও বন্ধ হয়ে যায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্প কঠিন এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া মুমূর্ষু প্রকাশনাশিল্প বাঁচানো অসম্ভব। আপনার তড়িৎ সিদ্ধান্তের ওপর এখন এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আমরা আশা করি, আপনি সময়োচিত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবেন।’
মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে অনেকে আশা নিয়ে অনেকে অনেক বই প্রকাশ করেছে। ভেবেছিল এ বছর করোনার প্রভাব কম থাকবে। কিন্ত পরস্থিতি অনুকূলে ছিল না। এখন সার্বিক বিবেচনায় সরকার চাইলে এগিয়ে আসতে পারে।’
যাদের মিস করেছে মেলা!
মেলায় এবার অনেকেই সশরীরে ছিলেন না, কিন্তু ছিলেন স্টল-প্যাভিলিয়নের বইয়ের প্রচ্ছদে, হাজারো পাঠকও শুভানুধ্যায়ীদের হৃদয়ে। এই গুণীজনরা হলেন- জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অভিনেতা ও নাট্যসংগঠক আলী যাকের, ভাষাসংগ্রামী সুফিয়া আহমেদ, কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলা, ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক মান্নান হীরা, সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, স্থপতি বশিরুল হক, সুরকার আলাউদ্দিন আলী, চিত্রশিল্পী মনসুর উল করিম, আবু তাহের, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মিজানুর রহমান খান ও সাংবাদিক মাহমদুদুর রহমান খোকন প্রমুখ।
Comments