উদ্যান পরিকল্পনায় বাড়ছে ইমারত, কমছে সবুজ: বিআইপি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা অভিযোগ করেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কনক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের আগে আইন অনুযায়ী "নগর উন্নয়ন কমিটি"র মতামত নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি নেওয়া হয়নি। তাছাড়া পাবলিক পার্কের মতো জায়গায় ৫ ভাগের বেশি জায়গায় ইমারত নির্মাণ করা যাবে না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যার পরিমাণ ৩৭ ভাগ।
আজ রবিবার 'উদ্যান-পার্কের উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষা' শীর্ষক এই পরিকল্পনা সংলাপের আয়োজন করা হয়।
এ সময় বক্তরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ নগর এলাকার বিভিন্ন পার্ক-উদ্যানের পরিকল্পনা ও নকশায় প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশকে প্রাধান্য না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ ও কংক্রিটের ব্যবহারের মাধ্যমে পার্ক-উদ্যানের চরিত্র পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে।
তারা বলেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী এই প্রবণতা শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই নয়, ওসমানী উদ্যানসহ সমসাময়িক অনেক পার্ক ও গণপরিসর নির্মাণের পরিকল্পনা নকশায় দেখা গিয়েছে।
বিআইপি সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার ফল উপস্থাপন করে বলেন, উদ্যান-পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো, কংক্রিট ও ধূসর এলাকা আশংকাজনক হারে বাড়ছে, বিপরীতে উদ্বেগজনক হারে সবুজের পরিমাণ কমছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রস্তাবিত নকশায় অবকাঠামো, কংক্রিট ও ধূসর এলাকার পরিমাণ শতকরা ৩৭ ভাগ, ওসমানী উদ্যানে ৫২ ভাগ, গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে ৩৭ ভাগ ও বনানী পার্কে ৪২ ভাগ।
তিনি বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালাতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, পাবলিক পার্ক এবং খোলা পরিসরে যে কোন ইমারত নির্মাণের জন্য অনুমোদনের প্রয়োজন হবে এবং খোলা পরিসরের শতকরা ৫ ভাগের বেশি জায়গায় অবকাঠামো হতে পারবে না।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনার প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবি যথা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্
এছাড়াও তিনি পেশাজীবীদের 'প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স এবং স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস' মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ এর ক্ষতিসাধন এর সাথে সাথে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। যেন বাংলাদেশের আর কোথাও পরিবেশ-প্রতিবেশকে ধ্বংস করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে হঠকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া না হয়।
পরিকল্পনা সংলাপে বিআইপি'র সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ প্রকৃতি সংরক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান উদ্যান বা পার্কের বৈশিষ্ট্য ক্ষতি না করে নতুন উদ্যান বা পার্ক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় আনা উচিত।
সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প পরিবেশবান্ধব না হলে সেটিকে জনবান্ধব উন্নয়ন বলা যাবে না। এই ধরনের প্রকল্পে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো প্রকল্প গৃহীত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে জরিমানার আওতায় আনতে হবে।
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের (ড্যাপ) প্রকল্প-পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর প্রস্তাবিত পরিকল্পনা 'উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০' এর ধারা ও মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। পার্ক-উদ্যানের পরিকল্পনার তিনি কোনো গণশুনানি ছাড়া যেন প্রকল্প অনুমোদন করা না হয় তার দাবি জানান।
বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, সরকারের বিভাগগুলো প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কত টাকার প্রকল্প নিতে পারে। জরুরি না অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, সেটি ব্যাপার নয়। যেনতেন ভাবে একটি প্রকল্প নিয়ে টাকা খরচ করা হচ্ছে। গাছ কেটে, কংক্রিট দিয়ে ঢেকে উদ্যানের চরিত্র বদলে ফেলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-
Comments