‘আমার গ্রাম আমার শহর—বাস্তবায়নে যেন গোটা দেশ ঢাকা শহর না হয়’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সে (বিআইপি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পরিকল্পনাবিদরা এ কথা বলেন। 
শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পরিকম্পনাবিদরা। ছবি: সংগৃহীত

'গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করা হবে—এ ধরনের স্লোগান বা প্রতিপাদ্যে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। 

তারা বলছেন, সম্প্রতি সরকারি সংস্থাগুলো অতি ব্যয়বহুল ভবন বা অবকাঠামো প্রকল্পের দিকে অতি আগ্রহের কারণে গ্রামীণ এলাকায় অনেক অপ্রয়োজনীয় ভবন বা অবকাঠামো নির্মিত হবে। 

শনিবার রাজধানীর বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সে (বিআইপি) এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পরিকল্পনাবিদরা এসব কথা বলেন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে সাতটি খাতের পরিকল্পনা, ঘোষিত সাফল্য ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানাতে বিআইপি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণে একাদশ সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল 'আমার গ্রাম, আমার শহর' প্রকল্প। দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দেশের প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা আরও উন্নত করার অঙ্গীকার করে।

এ প্রসঙ্গে বিআইপি সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, 'এ ধরনের প্রকল্পে পরিকল্পনাবিদদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ দুর্বলভাবে থাকায় এবং প্রকৌশলীদের সংগঠন দ্বারা প্রকল্প পরিচালিত হওয়ার কারণে গ্রামীণ এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভবন বা অবকাঠামো নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।' 

তিনি বলেন, 'পরিকল্পনা সংস্থা তৈরি না করে প্রকৌশলীদের দিয়ে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সময় যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে অবকাঠামো তৈরির দিকে ঝুঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকাল বিআইপি সভাপতি স্থানীয় সরকারে জনগণের ক্ষমতায়ন, যোগাযোগ, মেগা প্রকল্প, শিল্প উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষাসহ সাতটি খাতে সরকারের গত দুই নির্বাচনী ইশতেহার, সাফল্য নিয়ে বিআইপির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

সড়কপথে যোগাযোগ নিয়ে বিআইপির পর্যবেক্ষণ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বড় সাফল্য আছে। কিন্তু, পরিকল্পনা যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করে অনেক এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকরণে সরকার অধিক ব্যয়বহুল প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে মন্তব্য করে বিআইপি সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, 'ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা সম্ভব হলেও, বাসরুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে যানজট কমেনি। সড়ক নির্মাণকাজের মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে।'

বিআইপির নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, 'অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ এবং ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেশের পৌরসভাগুলোর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল ২০০৮ সালে। এর মধ্যে ২৫৬টি পৌরসভার মহাপরিকল্পনার কাজ শেষ হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো প্রণয়নে ৩২ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্যয়বহুল এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।' 

বিআইপি সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, 'পৌরসভার মহাপরিকল্পনাগুলো তৈরি হলেও গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। পৌরসভাগুলোর প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব আছে। ফলে গ্রামীণ নগর হিসেবে পরিচিত পৌরসভাগুলো অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে উঠছে।'

বিআইপি সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, 'নাগরিক সুবিধা দিতে আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পটি নেওয়া হয়। তবে সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গোটা দেশ যেন ঢাকা শহরে পরিণত না হয়, এটা মাথায় রাখতে হবে।'

সংবাদ সম্মেলনে নগর পরিকল্পনার জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিআইপির যুগ্ম-সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নগর পরিকল্পনা নিয়ে একটা একক সংস্থা বা মন্ত্রণালয় গঠন করা যেতে পারে যে সংস্থাটির কাজ হবে সব প্রকল্পের সমন্বয় করে পরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়ন করা।'

Comments