পটুয়াখালী

বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন দুর্গতরা

ঝুপড়ি ঘর তুলে কোনো রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া গ্রামের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা ঝুপড়ি ঘর তুলে কোনো রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করছেন।

এখানকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। রাবনাবাদ নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ইয়াস ও পূর্ণিমার জলোচ্ছ্বাসে গ্রামে ঢোকা কোমর ও বুক সমান পানি গত পাঁচদিনেও নামেনি।

গৃহবধূ হামিদা বেগমের (৫৫) মেয়ে ও নাতি-নাতনি আট জনের সংসার এখন বেড়িবাঁধে। জোয়ারের পানিতে তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। হাঁস-মুরগি মরে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পলিথিন দিয়ে বাঁধের ওপরে বানানো ঝুপড়িতে এখন ঠাঁই নিয়েছেন।

তিনি জানান, তিন দিন আগে বালিয়াতলী ইউনিয়নের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো রান্না করা ভাত দিয়ে তিনদিন চলছে। এখন আলগা চুলায় রান্নার চেষ্টা করছেন।

পলিথিন দিয়ে বাঁধের ওপরে বানানো ঝুপড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকেই। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

আরেক গৃহবধূ ডালিয়া বেগমের স্বামীসহ পাঁচজনের সংসার। অন্য ইউনিয়ন চরবালিয়াতলী গ্রামের আত্মীয় বাড়ি থেকে রান্না করা পাঠানো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। দিনমজুর স্বামীও এখন বেকার। তিনটি ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে তাতে রান্নার চেষ্টা করছেন তিনি।

একই দশা বৃদ্ধা রুশিয়া বেগমের। সকাল ১০টা পর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি। রাতেও উপোষ করেছেন। ছোট্ট শিশু মরিয়মকে অন্যবাড়িতে নিয়ে কিছু খাইয়েছেন। স্বামী আলাম গাজী সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে বউ, মেয়ে-ছেলে নিয়ে আট জনের সংসারে এখন হাহাকার।

জোয়ারের পানি না নামায় এসব পরিবার বাড়ি ফিরতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপরে দক্ষিণ দিকে এ মানুষগুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। গোসলসহ ব্যবহারের পানি নেই। এছাড়া, আর্থিক সংকট তো আছেই।

ক্ষতিগ্রস্ত সাজিম হাওলাদার জানান, একটি পলিথিনের নিচে ছয় জনের সংসার নিয়ে আছি। ২০০৭ সালের সিডরের পরে এতো পানি আর দেখেননি। কিছু শুকনা খাবার পেয়েছেন, তাতে কী আর ক্ষুধা মেটে। এখন জরুরিভিত্তিতে চাল-ডালসহ খাবার সহায়তা প্রয়োজন।

বেড়িবাঁধের ওপরে দক্ষিণ দিকে এ মানুষগুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অধিকাংশকেই চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে। কোনো সংকট নেই। তারপরও অর্ধশত পরিবার পানিবন্দির কারণে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, সরকারের দেওয়া ত্রাণ সহায়তা স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারপরও কারো কোনো খাদ্যসহ কোনো সমস্যা থাকলে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

3h ago