হত্যা-গুম-হামলার আশঙ্কায় সংসদ সদস্য একরামসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে কাদের মির্জার জিডি
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দুই ভাগ্নেসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যা, গুম ও হামলার আশঙ্কায় এই সাধারণ ডায়েরি করেন কাদের মির্জা।
থানায় সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ।
অভিযোগটি তিনি নিজে তদন্ত করছেন বলেও জানিয়েছেন।
কাদের মির্জার অভিযোগ, সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলসহ তার তিন ভাগ্নে দেশের মধ্যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছেন।
এ ছাড়া, আমেরিকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নুরুল করিম জুয়েল, তার শ্বশুর আল-আমিন, সেলিম চৌধুরী, ভিপি বাবুল, সাহাব উদ্দিন, শাহজাহান ছোটনসহ অনেকে তাকে হত্যা করে লাশ গুমের পরিকল্পনা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কাদের মির্জা।
তিনি ৯৬ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এই সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অভিযোগে কাদের মির্জা আরও বলেছেন, গত ৫ জুন আমেরিকার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় আমেরিকায় আল-আমিনের বাড়িতে ও পরদিন ৬ জুন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় সংসদ সদস্য একরামের কবিরহাটের বাড়িতে অভিযুক্ত আসামিরা বৈঠক করে তাকে (কাদের মির্জা) হত্যা করে লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন।
এ ছাড়া, গত বুধবার সন্ধ্যায় তার ভাগ্নে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুর বসুরহাট পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসায় বৈঠক করে কাদের মির্জার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও তার পরিষদের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে অনাস্থা দিয়ে তাকে পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কাদের মির্জা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের (একাংশ) মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু গত বুধবার সন্ধ্যায় তার বাসায় আওয়ামী লীগের সভার বিষয়টি স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই সভায় কাউকে হত্যা বা গুম করার পরিকল্পনা হয়নি। এমনকি, কাউকে হামলা বা পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনাও হয়নি। সেখানে দলীয় কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার জন্য আলোচনা হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জিডির বিষয়টি স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাদের মির্জা একজন অসুস্থ লোক। তিনি উন্মাদের মতো যা-ইচ্ছে-তাই বলে ও করে বেড়াচ্ছে। গতকাল লাইভে এসে তিনি আমাদের প্রিয় নেতা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে নিয়েও বাজে কথা বলেছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড কোম্পানীগঞ্জবাসীর কাছে এখন পাগলামি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে আব্দুল কাদের মির্জার সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করলে ফোন রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী যুবলীগ নেতা স্বপন মাহমুদ। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেয়র ক্লান্ত। সকাল থেকে অনেক কাজ করেছেন। বিশ্রাম করছেন। কথা বলতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুন কাদের মির্জা তার অনুসারীদের ওপর প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলা ও গুলির অভিযোগে তার আপন দুই ভাগ্নে, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলসহ ৮৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।
কোর্টের ৪ নং আমলি আদালতের বিচারক এসএম মোসলেহ উদ্দিন মিজান আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে তিনি নোয়াখালী পিবিআইকে অভিযোগটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:
অস্ত্র তাক করে রেখেছে, আমাকে মেরে ফেলতে পারে: কাদের মির্জা
ডেইলি স্টারকে যা বললেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা
অনেক বিপদে আছি, চাপে আছি, রাতে আমার ঘুম হয় না: কাদের মির্জা
প্রধানমন্ত্রী আমাকে শান্ত থাকতে বলেছেন, তাই শান্ত আছি: কাদের মির্জা
আল্লাহর গজব পড়বে, আমি ঈমানদার: কাদের মির্জা
আমরা যাকে মন্ত্রী বানিয়েছি সেই মন্ত্রীর কাজ কী: কাদের মির্জা
আপনার মন্ত্রণালয়ের সব খবর জানি, সব বলে দেব: ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে কাদের মির্জা
Comments