৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক নাজুক, খারাপ বা খুব খারাপ: সওজের সমীক্ষা

গত বছরের তুলনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে থাকা সড়কের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও, এখনো তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক ‘নাজুক, খারাপ বা খুব খারাপ’ অবস্থায় আছে বলে সওজের এক সমীক্ষায় জানা গেছে।
Brahmanbaria_Road_12June21.jpg
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় শাহাজাদাপুর থেকে শাহবাজপুর যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি ৫০ বছরে পাকা হয়নি। ছবি: স্টার

গত বছরের তুলনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে থাকা সড়কের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও, এখনো তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক ‘নাজুক, খারাপ বা খুব খারাপ’ অবস্থায় আছে বলে সওজের এক সমীক্ষায় জানা গেছে।

বেহাল দশায় থাকা এ তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক সওজের মোট সড়কের ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

মেইনটেনেন্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন নিডস রিপোর্ট ২০২১-২২ এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান অর্থবছরে এগুলো মেরামত করতে প্রায় ১৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ছয় কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

কিন্তু, সরকার বাজেটে এ বাবদ তিন হাজার ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা প্রয়োজনীয় অর্থের প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ মাত্র। তার ওপর, এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সারাদেশের সব সড়ক ও সেতু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ।

ফলে জরাজীর্ণ সড়ক, বিশেষ করে জেলা পর্যায়ের জরাজীর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে বলে মনে করছেন সওজের প্রকৌশলীসহ বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তহবিল সংকট থাকায় মেরামতের ক্ষেত্রে এসব সড়ক অগ্রাধিকার পাবে না।

সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় সড়কের বেহাল দশাকে। আর এ বেহাল অবস্থার জন্য অতিরিক্ত পণ্যবাহী পরিবহন , জলাবদ্ধতা ও দুর্বল নির্মাণ কাজকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সওজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য দুর্বল নির্মাণ কাজকে এর মূল কারণগুলোর একটি হিসেবে মানতে নারাজ। ‍তারা এ দুর্দশার জন্য অতিরিক্ত পণ্যবাহী পরিবহন ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতাকে দায়ী করছেন। 

সমীক্ষার ফলাফল

সওজের তথ্য অনুসারে, সারাদেশে তাদের অধীনে ২২ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক রয়েছে।

যেহেতু পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না, তাই নিজেদের অধীনে থাকা সড়কগুলো মেরামতের মোট ব্যয় নির্ধারণ করতে এবং মেরামতের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করতে প্রতি বছরই সমীক্ষা পরিচালনা করে থাকে সওজ। 

সবশেষ সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে। গতকাল রোববার সওজের ওয়েবসাইটে এ সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর মোট ১৮ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার (সওজের মোট সড়কের ৮২ দশমিক ৩৬ শতাংশ) সড়কের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। উন্নয়ন বা পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে এমন সড়কগুলোকে জরিপের আওতায় আনা হয়নি।

সমীক্ষায় এক হাজার ৫২৪ কিলোমিটার (আট দশমিক ২৫ শতাংশ) সড়ককে ‘নাজুক’, ৭৮৯ দশমিক ছয় কিলোমিটার সড়ককে ‘খারাপ’ এবং ৬৯১ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সড়ককে ‘খুব খারাপ’ অবস্থার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ তিনটি মিলিয়ে সওজের মোট তিন হাজার ছয় কিলোমিটার সড়ক বেহাল অবস্থায় আছে। বাকি সড়কগুলো ‘ভালো’ অথবা ‘মোটামুটি’ অবস্থায় আছে বলে সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে। 

সমীক্ষার বিষয়ে ওয়াকিবহাল সওজের এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সওজ কর্মকর্তারা সড়কগুলোকে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, কোনো সড়ককে ‘খুব খারাপ’ শ্রেণীতে পড়ে গেলে, ওই সড়কের দিকে দ্রুত নজর দিতে হয়। এ ছাড়া, যেসব সড়ক ‘খারাপ’ শ্রেণীতে পড়ে, সেগুলোর দিকেও মনোযোগ ‍দিতে হয়। তা না হলে, পরের বছর এগুলো ‘খুব খারাপ’ সড়কে পরিণত হয়।

আর ‘নাজুক’ সড়ক হচ্ছে সেসব সড়ক, যেগুলো দিয়ে যাতায়াত করতে মানুষের তুলনামূলক বেশি সময় লাগে এবং ভ্রমণ তুলনামূলক কম আরামদায়ক হয়। 

গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত পূর্ববর্তী সমীক্ষা প্রতিবেদনে তিন হাজার ৫৯০ কিলোমিটার (১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ) সড়ককে ‘নাজুক, খারাপ  অথবা খুব খারাপ’ অবস্থার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের সমীক্ষায় এ তিন ধরনের অবস্থায় চিহ্নিত করা হয়েছিল চার হাজার ২৪৭ কিলোমিটার সড়ককে (২৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ)।

সড়কের বেহাল দশার কারণ

দেশের অন্যতম পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হকের মতে, অতিরিক্ত পণ্যবাহী পরিবহন, জলাবদ্ধতা, দুর্বল নির্মাণ কাজ এবং সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব সড়কের বেহাল দশার মূল কারণ।

অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলার অনুমোদন দেওয়াকে সরকারের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘এসব ট্রাকের কারণে সময়ের অনেক আগেই সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি জানান, টু-এক্সেল একটি ট্রাকের ১৬ টন পণ্য বহন করার কথা। কিন্তু, সরকার এগুলোকে ২২ টন বহনের অনুমতি দিচ্ছে। একইভাবে বড় আকৃতির ট্রাকগুলোও উৎপাদকদের নির্ধারিত ধারণক্ষমতার বেশি বহন করছে। 

অধ্যাপক শামসুল বলেন, ‘বেশিরভাগ সড়কে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

এ ছাড়া, দুর্বল নির্মাণ কাজ এবং সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও সড়কের এ অবস্থার পেছনে দায়ী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সওজের লোকজন আসলে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ করে না। তারা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেগুলো ঠিক করে শুধু।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সওজের প্রদান প্রকৌশলী আবদুস সবুর সড়কের বেহাল অবস্থার কারণ হিসেবে দায়ী করেন বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতাকে। 

গতকাল রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাই না আমরা। তবে, সীমিত বরাদ্দ নিয়েও আমরা রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করি।’

সওজের নথি অনুসারে, তাদের ১৪ হাজার ৬২২ কোটি টাকার চাহিদার বিপরীতে বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।

কিছু ক্ষেত্রে যে সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য অতিরিক্ত পণ্যবাহী পরিবহন ও সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব দায়ী, তা স্বীকার করলেও, দুর্বল নির্মাণ কাজকে এর কারণ হিসেবে মানতে রাজি হননি আবদুস সবুর। 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago