এবার আফিফের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল বাংলাদেশ

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে এবার ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
Afif Hossain
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

জশ হ্যাজেলউডকে আপার কাট করে উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে সীমানায় পাঠিয়েই নির্ভার আফিফ হোসেন ছুটলেন সতীর্থ নুরুল হাসান সোহানের দিকে। চওড়া হাসিতে সারলেন উদযাপন। শেষটাতেও মিশে থাকল ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে তার দাপটের ছবি। এই বাঁহাতি তরুণের ঝলকে অস্ট্রেলিয়াকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারাল বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে এবার ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে। বুধবার আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে কেবল ১২১ রান করতে পেরেছিল অজিরা। ৮ বল আগে ওই রান পেরিয়ে উল্লাসে মেতেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

মন্থর উইকেটে অবশ্য কাজটা সহজ করে রেখেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমানই। তবে রান তাড়ায় গিয়ে তৈরি হয় বিপদ। সাকিব আল হাসানের কার্যকর এক ইনিংসের পর এক পর্যায়ে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৪৪ বলে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে কাজটা সারেন আফিফ-সোহান।

নাগালে থাকা রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারে ৯ তোলার পর তৃতীয় ওভারে গিয়ে স্ট্রাইক পান সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচের মতো এদিনও ব্যর্থ তিনি। মিচেল স্টার্কের ফুল লেংথের ডেলিভারিতে পা জায়গায় রেখে ক্রস খেলতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। উড়ে যায় তার স্টাম্প। সবশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে সেরা হওয়া এই ওপেনার এবার ফেরেন ২ বলে ০ করে।

খানিক পরই নাঈম শেখও বিদায় নেন। হ্যাজেলউডের বলে বোল্ড হন তিনি। তিনে নেমেই সাকিব পেয়ে যান তিন চার। থিতু হতে সমস্যা হয়নি তার। 

শেখ মেহেদী হাসানকে নামানো হয় চারে। বেশ কয়েকবার আউটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অল্পের জন্য তার ক্যাচগুলো ফিল্ডারদের হাতে যাচ্ছিল না।

সামলে নিয়ে সাহস কিছুটা বেড়ে যায় মেহেদীর। পরে অ্যাডাম জাম্পাকে সোজা ছক্কাতেও উড়ান তিনি। সাকিব বেশ চনমনে ছিলেন। অ্যান্ড্রু টাই আসতেই পেয়ে গিয়েছিলেন বাউন্ডারিও। তবে স্লোয়ার বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে সমাপ্তি তারও। অবশ্য ১৭ বলে ২৬ রান লো স্কোরিং ম্যাচে বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

মাহমুদউল্লাহ এসেই নড়বড়ে ভাব দেখাচ্ছিলেন। টিকতেও পারেননি। অ্যাস্টন অ্যাগারের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল স্টাম্পে টেনে কোনো রান না করেই বিদায় নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

শুরুর ফাঁড়া কাটিয়ে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন মেহেদী। কিন্তু কাজটা শেষ করে আসা হয়নি। জাম্পাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে বেরিয়ে মারতে গিয়ে হন স্টাম্পিং। ২৪ বলে ২৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদেই পড়ে গিয়েছিল দল। এই জায়গা থেকে টেনে তোলেন আফিফ ও সোহান। ষষ্ঠ উইকেটে মহাগুরুত্বপূর্ণ ৫৬ রানের জুটি গড়েন তারা। 

ইনিংসের ১৬তম ওভারে তাদের জন্য খেলা সহজ করে দেন বরং অজি পেসার স্টার্ক। দুই চারে ওই ওভার থেকে ১৩ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। মন্থর উইকেটে স্টার্কের জোরের উপর করা বলগুলো ব্যাটে আসে ভালোভাবে। চাপ তখনই একদম কমে যায়। বাকি সময়টায় কোনো রকম অস্থিরতায় ভোগেননি বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটার।

সোহান অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ২২ রান করে। ৩১ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ আসে আফিফের ব্যাটে। প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও একদম সাবলীল দেখায় তাকে। দুই দলের সব ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার মধ্যেই মেলে দুরূহ উইকেটে খেলার সবচেয়ে কার্যকর কৌশলের।

মিরপুরের উইকেটে এদিন ছিল আগের দিনেরই ছায়া। টসও জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই। তবে টার্নিং উইকেটে রান তাড়ার ঝুঁকি না দিয়ে আগে ব্যাট করতে যায় তারা।

লাভ হয়নি। বিস্তর ভোগান্তিই পোহাতে হয়েছে। শুরুটা অবশ্য কিছুটা ভালো। প্রথম ম্যাচে ০ রানে ফেরা অ্যালেক্স ক্যারি এবার ১১ রান করতে পারেন।

ক্যারি শুরুতে রিভার্স সুইপে দুই চারও পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে এবারও ইনিংস 'ক্যারি' করতে পারেননি। আগের মতোই তার হন্তারক শেখ মেহেদী।  আরেক ওপেনার জশ ফিলিপি এদিনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। মোস্তাফিজুর রহমানকে এক চার মারার পর স্লোয়ারে বোকা বনে হন বোল্ড।

এরপর তৃতীয় উইকেটে মিচেল মার্শের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন মোজেস হেনরিকস। হেনরিকসকে ফিরিয়ে সাকিব ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটি ভাঙতেই দেড়শোর পুঁজি পাওয়ার আশা মিলিয়ে যায় অজিদের।

তবে আগের ম্যাচের মতো মার্শ অপরাজিত ছিলেন বলেই চিন্তাটা ছিল বাংলাদেশের। তবে বিপদ বড় হওয়ার আগে তাকে ছাঁটেন শরিফুল ইসলাম। তার বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মার্শ। আগের দিনের মতো ঠিক ৪৫ রান আসে তার ব্যাটে। তফাৎ হলো এবার বল খেলেন তিনটা কম।

পরের ওভারে মোস্তাফিজ এসে বোল্ড করেন দেন অজি কাপ্তান ম্যাথু ওয়েডকে। চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পাওয়ার সম্ভাবনাও তখন তাদের হাওয়া। পরের বলেই দারুণ কাটারে বিদায় করেন অ্যাস্টন অ্যাগারকে। মোস্তাফিজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরের ওভারে অ্যাস্টন টার্নারকে ছাঁটেন শরিফুল।

শেষ পর্যন্ত কোনোমতে ১২০ রান ছাড়াতে পারে তারা। মন্থর উইকেট হলেও এত অল্প রান করে বাংলাদেশকে আটকে রাখা সম্ভব ছিল না তাদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১২১/৭ (ফিলিপি ১০, ক্যারি ১১, মার্শ ৪৫, হেনরিকস ৩০, ওয়েড ৪, টার্নার ৩, অ্যাগার ০, স্টার্ক ১৩*, টাই ৯*; শেখ মেহেদী ১/১২, নাসুম ০/২৯, সাকিব ১/২২, মোস্তাফিজ ৩/২৩, শরিফুল ২/২৭, সৌম্য ০/৭)।

বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১২৩/৫ (নাঈম ৯, সৌম্য ০, সাকিব ২৬, শেখ মেহেদী ২৩, মাহমুদউল্লাহ ০, আফিফ ৩৭*, সোহান ২২*; স্টার্ক ১/২৮, হ্যাজেলউড ১/২১, অ্যাগার ১/১৭, জাম্পা ১/২৪, টাই ১/২৭, মার্শ ০/৬) 

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আফিফ হোসেন। 

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

38m ago