আর কোনো শিশুকে যেন রাসেলের ভাগ্যবরণ করতে না হয়: প্রধানমন্ত্রী

এই দেশে যেন ’৭৫ এর মতো হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের পুনারাবৃত্তি না ঘটে এবং আর কোনো শিশুকে যেন রাসেলের ভাগ্যবরণ করতে না হয় সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই দেশে যেন '৭৫ এর মতো হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের পুনারাবৃত্তি না ঘটে এবং আর কোনো শিশুকে যেন রাসেলের ভাগ্যবরণ করতে না হয় সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'এই বাংলাদেশে আর কোনো দিন যাতে হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্র না হয়। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যাতে এভাবে জীবন দিতে না হয় এবং দেশের অগ্রগতি যাতে থেমে না যায় সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।'

আমাদের আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটাই আহ্বান জানাবো, এই শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়া, ভালবাসা দেওয়া, সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনকে সার্থক এবং অর্থবহ করা—এই কর্তব্য পালনই যেন সকলের আদর্শ হয়।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র এবং '৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শহিদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত 'শেখ রাসেল দিবস-২০২১' এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি আজ সোমবার সকালে গণভবন থেকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

'৭৫ এ শিশু রাসেলসহ জাতির পিতার পুরো পরিবারের হত্যাকাণ্ড, এর পরবর্তীতে একের পর এক ১৯টি ক্যু এবং ক্যু নিবৃত্ত করার নামে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা, ২০০১ পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামায়াতের সীমাহীন সন্ত্রাস এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগেই অকালে ঝরে যাবে এটা কারো কাম্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা এ রকম চাই না বরং চাই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেকটি শিশুর জীবন এই দেশে অর্থবহ এবং সুন্দর হবে। কেউ অকালে ঝরে যাবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে দেশবাসীর কাছে দেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়ার সঙ্গে শিশুদের নিরাপত্তা প্রদানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালেই শিশু নিরাপত্তার জন্য আইন প্রণয়ন করে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঘাতকের হাতে তারই সন্তানদেরকে মৃত্যুবরণ করতে হয়, হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিবেশিত শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশব ভিত্তিক অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা 'শেখ রাসেল এক অনন্ত বেদনার কাব্য' এবং 'থিম সঙ্গ' পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু-এ ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ১ ভরি করে ১০টি 'শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক', ১০টি ল্যাপটপ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া, শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ এবং লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে হতে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মাঝে ৪ হাজারটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল জাতিয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে সারাদেশে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং স্টেডিয়াম প্রান্তে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী রোলার স্কেটিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং 'শেখ রাসেল শৈশবে ঝড়ে যাওয়া ফুল' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রকাশিত 'শেখ রাসেল দৃপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক ও উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়।

উল্লেখ্য, শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর তার জন্মদিনকে 'শেখ রাসেল দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত 'শেখ রাসেল দিবস ২০২১' এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস'।

এ দেশের শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্যই শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশে নিয়োজিত এই সংগঠনটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সকলকেও ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত 'শেখ রাসেল দিবস ২০২১' এর প্রতিপাদ্য 'শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস'- যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ, আমাদের দেশের শিশুরা একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে গড়ে উঠুক।

তিনি বলেন, আমাদের শিশুদের ভেতরের যে সুপ্ত প্রতিভা এবং জ্ঞান রয়েছে তা বিকশিত হোক এবং আগামীর বাংলাদেশ যেন স্বাধীন বাংলাদেশের আদর্শ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গড়ে উঠতে পারে।

তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে তাদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্য সম্পদ চুরি হতে পারে বা হারাতে পারে। কিন্তু লেখাপড়া এবং শিক্ষা এটা এমন একটা সম্পদ যেটা কেউ কারো কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না।

তিনি করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এখন তার সরকার ধীরে ধীরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

6h ago