ভাড়া বাড়ল ২৮ শতাংশ যাত্রীদের থেকে আদায় ৫০ শতাংশ

সরকারের বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদায় চলছে ইচ্ছেমত। অনেক পরিবহনই ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া না বাড়লেও অনেক পরিবহন নতুন রেটে ভাড়া আদায় করছে। 
স্টার ফাইল ফটো

সরকারের বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদায় চলছে ইচ্ছেমত। অনেক পরিবহনই ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া না বাড়লেও অনেক পরিবহন নতুন রেটে ভাড়া আদায় করছে। 

উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলী আকবরের কথা বলা যায়। তিনি বহদ্দারহাট থেকে মিনিবাসে করে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন। বহদ্দারহাট থেকে নিউমার্কেটের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার, নতুন রেট অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ ১২ টাকা ৩৫ পয়সা ভাড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু আকবরকে দিতে হয়েছে ২০ টাকা।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'যখন আমি এর প্রতিবাদ করি, তখন হেলপার আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।'

একই অভিযোগ করেছেন স্কুল শিক্ষক শিপ্রা পাল। তিনি জানান, সিএনজিচালিত বাস ভাড়া না বাড়লেও চকবাজার থেকে সিএনজিচালিত মিনিবাসে কোতোয়ালি যেতে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

'কিন্তু কেউ কি নিয়ম মানে? আমরা সাধারণ মানুষ চূড়ান্ত ভুক্তভোগী,' বলেন তিনি।

গতকাল বন্দরনগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, ষোলশহর, অক্সিজেন, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ও চকবাজার এলাকা ঘুরে সিএনজিচালিত মিনিবাস ও বাসগুলোকে যাত্রীদের কাছ থেকে আগের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।

একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকায়; সরকারের নির্ধারিত ২৮ শতাংশের বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রীদের।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহসান হাবীব গতকাল গুলিস্তান থেকে 'এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহন লিমিটেড' বাসে ফার্মগেটে আসেন। তাকে ১৫ টাকা বাস ভাড়া দিতে হয়েছে, যা আগের ভাড়ার তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

তিনি জানান, কয়েকজন যাত্রী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে বাসের কন্ডাক্টরকে জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, 'প্রতিটি বাসই বেশি ভাড়া নিচ্ছে।'

গতকাল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ২২০টি বাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে অন্তত ৬৭টি বাস আটক করে।

বিআরটিএ'র এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২২০টি বাসের মধ্যে ২৯টি সিএনজিচালিত বাস এবং ৩৮টি ডিজেলচালিত বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিল।

পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'যেহেতু এটি প্রথম দিন ছিল, তাই আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি, বরং বাস অপারেটরদের যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দিতে বলা হয়।'

তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে বিআরটিএ মোট জরিমানা করেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। যোগাযোগ করা হলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, 'আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বাসকে জরিমানা করেছে।'

প্রথম দিনই ঢাকায় কিছু 'অনিয়ম' হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা আশা করছি, ভাড়ার চার্টটি বাস অপারেটরদের এক বা দুই দিনের মধ্যে সরবরাহ করা হলে এই বিষয়গুলো ঠিক হয়ে যাবে।'

সিএনজিচালিত বাসের নতুন ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাজধানীতে ৫ হাজার বাসের মধ্যে মাত্র ২০০টি বাস সিএনজিতে চলছে এবং সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সেসব গাড়িচালকদের বর্ধিত ভাড়া আদায় না করতে বলা হয়েছে।'

'তবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমরা সব সদস্যদের কঠোর ভাষায় একটি চিঠি দেব, যাতে তারা অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, 'আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা আজ (সোমবার) বৈঠকে বসব।'

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) উত্তর জোনের উপ-কমিশনার আলী হোসেন জানান, পরিবহন ভাড়া নিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।'

সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে সরকার জনস্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।'

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

10h ago