কেন জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সরকারের মিশ্র বার্তা

যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেসব দেশের পাশে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস (কপ২৬) এ আমরা বাংলাদেশকে দাঁড়াতে দেখেছি। পাশাপাশি, বাংলাদেশ বিশ্বের দূষণকারী দেশগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দাবি তুলেছে। আমরা এ নিয়ে গর্বিত।

যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেসব দেশের পাশে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস (কপ২৬) এ আমরা বাংলাদেশকে দাঁড়াতে দেখেছি। পাশাপাশি, বাংলাদেশ বিশ্বের দূষণকারী দেশগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দাবি তুলেছে। আমরা এ নিয়ে গর্বিত।

তবে কপ২৬-এ যৌক্তিক দাবি তোলা সত্ত্বেও আমরা খুবই হতাশ এই কারণে যে, বাংলাদেশ সরকার কথার সঙ্গে তাদের নেওয়া উদ্যোগগুলো মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চল ও এর আশেপাশে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গবেষণা অনুযায়ী, এই ৮টি প্ল্যান্ট ১০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত, যা বিশ্বের যে কোনো জায়গার কয়লাচালিত পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। সিআরইএর তথ্য মতে, ৮টি প্ল্যান্ট চালু হলে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ কেজি পারদ এবং ৬ হাজার টন ছাই নির্গত হবে।

এই প্ল্যান্টগুলোর কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ৬টি বন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ অতিরিক্ত পারদ ও সালফার ডাই অক্সাইড দূষণের সংস্পর্শে আসতে পারে। সামুদ্রিক মাছের অভয়ারণ্য মারাত্মক প্রভাবিত হবে এবং কয়েক হাজার বিষাক্ত পদার্থের কারণে সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এই ধরনের একটি ক্ষতিকর প্রকল্প কেন এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে? এটি চালু করার সময় কি এই গুরুতর পরিণতিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল? আমাদের দেশ যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য এতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে আমাদের বন্যপ্রাণীকে বিপন্ন করার এবং আমাদের পরিবেশকে এইভাবে দূষিত করার কারণ কী হতে পারে? বিশেষ করে তখন, যখন ইতোমধ্যেই বিদ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প, বন উজাড় এবং ভূমি দখল পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে চলছে।

এটা অত্যন্ত হতাশাজনক যে, সরকারি কর্মকর্তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষাকে (ইআইএ) ত্রুটিপূর্ণ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে স্বীকার করার পরও মাতারবাড়ী পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ধাপের কাজ ইতোমধ্যেই অর্ধেক শেষ হয়েছে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ পরিচালনা করছে এবং এর পক্ষে আছে। যদিও জাইকা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কী পরিমাণ পারদ ও পিএম ২.৫ নির্গত হবে সেটি যাচাই করতে পারেনি। এটি উদ্বেগজনক যে, জুন মাসে জি-৭ সম্মেলনে জাপানে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধ করার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সত্ত্বেও তারা এই বিভ্রান্তিকর প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৮০ শতাংশের বেশি তহবিল দিচ্ছে জাপান।

কপ২৬-এ বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে তার প্রচেষ্টাকে সম্পূরক করার জন্য ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। তবে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনা নিয়ে চিন্তিত নয়।

আমরা সরকারকে এই ধরনের মিশ্র বার্তা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বন্ধ করে এর পরিবর্তে গ্রিন এনার্জির বিকল্পগুলো খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা এটাও আশা করি যে, বিশ্ব নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকবেন এবং যে দেশগুলো কয়লা প্রকল্পে অর্থায়ন করে বিশ্বের অন্যান্য অংশকে বিপন্ন করে চলেছে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

History of student protests in the USA

American campuses -- home to some of the best and most prestigious universities in the world where numerous world leaders in politics and academia have spent their early years -- have a potent history of student movements that lead to drastic change

2h ago