ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অন্তত ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিউমার্কেট এলাকায় গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অন্তত ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কলেজের শিক্ষক ও দক্ষিণ হোস্টেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার মাহমুদ রোববার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাত ৮টার দিকে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পর্যন্ত ৬ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে ২ জন শিক্ষার্থীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে।'

৪ জন তখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যালয়ে ছিল বলে জানান তিনি।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাশাপাশি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ওই ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে।

জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (রমনা বিভাগ) এইচ এম আজিমুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।'

তবে ঠিক কতজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।

তিনি বলেন, 'আমরা সব তথ্য যাচাই করছি। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।'

তবে ঢাকা কলেজ ও কলেজ ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপসম্পাদক (আন্তর্জাতিক বিষয়ক) সামাদ আজাদ জুলফিকার, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন, আতিকুজ্জামান রানা ও জহির হাসান জুয়েল এবং ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ রাব্বি ও তিতাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে, গত ১৯ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে যে দুই জন কুপিয়েছেন তাদের একজন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী ইমন বাশার বলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।

ডেলিভারিম্যান নাহিদকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী জাকিরকে কোপাতে দেখা যায়। ছবি: স্টার

নাহিদকে কোপানোর ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ইমনের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সূত্র জানায়, তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা সামাদ আজাদ জুলফিকারের অনুসারী।

এ বিষয়ে জুলফিকার ও ইমনের মন্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও, তা পাওয়া যায়নি।

কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে জানান, শনিবার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সংঘর্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরিচয় প্রকাশের পরপরই ইমন কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান।

রোববার কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের কক্ষ থেকে ইমনের দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

কলেজের শিক্ষক আনোয়ার মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ডিবির একটি দল ক্যাম্পাসে আসে। তারা ইমনের কক্ষ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে।'

প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের ৩টি গ্রুপের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের দোকানদারদের সঙ্গে সংঘর্ষে অংশ নেয়।

ওই সংঘর্ষে ডেলিভারিম্যান নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহত হন।

গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা জুলফিকার, ফিরোজ হোসেন ও জসিম উদ্দিন।

এর মধ্যে জসিমের অনুসারীরা অন্যদের চেয়ে বেশি আগ্রাসী ছিল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় নাহিদকে যারা পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তারা এখন পুলিশের নজরদারিতে আছেন।

পুলিশ জানায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কাইয়ুম প্রথমে নাহিদকে আঘাত করে। তার পরনে সাদা ডোরাকাটা নীল টি-শার্ট ছিল।

সংঘর্ষের সময় যারা দেশীয় তৈরি অস্ত্র, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা বহন করছিল তাদের অনেককেও শনাক্ত করা হয়েছে।

তাদের একজন হলেন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিন সাদেক মির্জা। তার সঙ্গে ছিল একটি চাপাতি।

সবুজ টি-শার্ট পরা ছাত্রলীগ কর্মী কাওসারও একটি চাপাতি বহন করছিলেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষার্থী এবং কলেজের সাউথ হোস্টেলে থাকেন।

হাতুড়ি হাতে থাকা আরেকজন মোনায়েম বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সদস্য বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহের এ সংঘর্ষের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। দুটি মামলা পুলিশ করেছে। আর দুটি মামলা করেছেন সংঘর্ষে নিহত দুই জনের পরিবারের সদস্যরা।

এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা দেড় হাজার জনের বেশি আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলা দুটি ডিবি তদন্ত করছে। অপর দুটি মামলা নিউমার্কেট থানার পুলিশ তদন্ত করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Free rein for gold smugglers in Jhenaidah

Since he was recruited as a carrier about six months ago, Sohel (real name withheld) transported smuggled golds on his motorbike from Jashore to Jhenaidah’s Maheshpur border at least 27 times.

11h ago