অশনির প্রভাবে যশোরে পানিতে ভাসছে ১ লাখ হেক্টর জমির ধান
যশোরে পানিতে ভাসছে ১ লাখ হেক্টর জমির কাটা ধান। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে মাঠে কেটে রাখা বোরো ধান।
আবহাওয়া অফিস বলছে, যশোরে এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, যশোরের ৮ উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। এবার ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। যশোরে গড়ে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখের হাসি ফুটলেও এখন ম্লান হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাব কেড়ে নিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, যশোরে ইতোমধ্যে কৃষকরা মাঠ থেকে ৪০ ভাগ বোরো ধান কেটে বাড়ি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি ধান এখনো পড়ে আছে মাঠে। কিছু খেতের ধান কেটে মাঠে রাখা হলেও, বাকি ধান শ্রমিক সংকটে কাটতে পারেননি কৃষক।
জেলায় এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে যশোর আবহাওয়া অফিস। এ বৃষ্টির পানিতেই কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের স্বপ্নের সোনালী ধান পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টিপাতে ধান খেতে পানি জমে আছে। মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে ভেসে উঠেছে। আগামী দু-একদিন সময় পেলেই কৃষকরা তাদের ধান ঘরে তুলতে পারতেন।
কৃষি বিভাগ আরও বলছে, এভাবে বৃষ্টিপাত হলে যারা ধান কেটে মাঠে ফেলে রেখেছেন, পানি জমে তাদের গোটা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা এখনো ধান কাটেননি, তারা কয়েকদিন পর কাটলে সমস্যা হবে না। ধান গাছ দাঁড়িয়ে থাকলে বৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি হবে না। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছ শুয়ে পড়লে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বর্তমানে যশোরে ধানকাটা শ্রমিকের চরম সংকট। তাদের একদিনের হাজিরার মূল্যই ১ হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আগে থেকে বায়না দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গোটা জেলায় এখনো অর্ধেকের বেশি পাকা ধান কাটা হয়নি।
কেশবপুর উপজেলার কৃষক আইয়ুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার ২ বিঘা জমির ধান কেটে মাঠে রাখা আছে। কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ধান ঘরে তোলা সম্ভব নয়। ২-৩ দিন মাঠে রাখতে হয়। দুদিন আগে ধান কেটে মাঠে রাখলেও শ্রমিকের অভাবে ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যশোরের কৃষকরা মাঠের ৪০ ভাগ বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি ৬০ ভাগ ধান এখনো মাঠে আছে। যার পরিমাণ ১ লাখ হেক্টরের কিছু কম। আগামী ৬-৭ দিন সময় পেলে মাঠের পুরো ধানই ঘরে উঠে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিপাতে কৃষকের সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক সংকটে কৃষকরা তাদের ধান ঘরে তুলতে পারছেন না।'
Comments