‘অইদ হইলে হামরা কাম পাই’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিশবাড়ীতে ভুট্টা শুকাচ্ছেন চাতাল শ্রমিকরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গ্রীষ্মের তপ্তরোদে পুড়ছে শরীর। মাথা থেকে অঝোরে ঝরছে ঘাম। ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর। কিন্তু, হাসেন আলী, উমেশ চন্দ্র, কোরবান আলী, সিরাজুল ইসলাম, মনজুর আলী, নীলমোহন রায়দের সেদিকে খেয়াল নেই। তারা ছুটছেন চাতালের একদিক থেকে অন্যদিকে।

রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ। তাই, দ্রুত ভুট্টাগুলো শুকানোর কাজ শেষ করতে হবে। এ জন্য তারা ভীষণ ব্যস্ত। মাথার উপর সূর্য আর পায়ের নিচে সিমেন্ট বালুর চাতাল। পায়ে নেই পাদুকা। ক্লান্তিহীন শরীর নিয়ে দিনভর চাতালে ধান-ভুট্টা শুকানোর কাজ করেন তারা। তবে, যে মজুরি পান তা পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্য নয় বলে তাদের দাবি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিশবাড়ী গ্রামের চাতাল শ্রমিক হাসেন আলী (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অইদ হইলে হামরা কাম পাই। সারাদিন কাম কইরলে হামরা একজন শ্রমিক ৫০০ টাকা করি মজুরি পাই।'

'ঝরি আইসলে আর দ্যাওয়াটা যদি ম্যাঘে ঢাকা থাকে তা হইলে সেদিন আর হামার কাম জোটে না,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, '৪০-৪৫ মিনিট কাম করির পর এ্যাকনা ৫-৭ মিনিটের জইন্যে গাছের ছায়ার নিচোত য্যায়া দম ন্যাঙ। অইদোত চাতালে কাম করা খুব কষ্ট হয়। কিন্তু, হামাকতো কাম করি খাওয়ায় নাগে।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই গ্রামের চাতাল শ্রমিক উমেশ চন্দ্র (৪৬) ডেইলি স্টারকে জানান, প্রচণ্ড রোদে লোকজন বাইরে বের হতে চান না। কিন্তু, চাতাল শ্রমিকরা খোলা আকাশের নিচে খালি পায়ে সিমেন্টের চাতালে ধান-ভুট্টা শুকানোর কাজ করেন।

তিনি বলেন, 'অইদোত সারাদিন কাম করি হামরা ৫০০ টাকা মজুরি পাই। সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হয় হামারগুলার। হামার জইন্যে অইদ ভালো। অইদ হইলে হামরা কাম পাই। বিষ্টি হইলে বাড়িত বসি থাকা নাগে।'

একই গ্রামের চাতাল শ্রমিক মনজুর আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রতিদিন সকাল ৮টায় কাজে আসেন আর কাজ শেষ হয় বিকেল ৫টায়। কখনো কখনো সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত কাজ করতে হয়। রোদের তাপ সহ্য করার অভ্যাস হয়ে গেছে। আগে মাঝে-মধ্যে অসুস্থ হতেন। এখন আর হন না।

তিনি বলেন, 'হামারগুলার মজুরি যদি ৭০০ টাকা করা হইল হয় তাক হইলে হামারগুলার পোষাইল হয়। এ্যালা কামাইর টাকা দিয়ে খ্যায়া দ্যায়া শ্যাষ হয়। হাতোতে টাকা জমা থাকে না।'

লালমনিরহাট জেলা সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালমনিরহাটে ৬ শতাধিক চাতালে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা ধান-ভুট্টা শুকানো ও প্রোসেসিং করে থাকেন। ধান সেদ্ধ ও ধান ভাঙার কাজ করেন। তাদেরকে যে শ্রম দিতে হয় তার তুলনায় মজুরি পান না।'

তার মতে, বৃষ্টি হলে কিংবা আকাশ মেঘলা হলে শ্রমিকরা কাজ পান না। যেদিন তারা কাজ করতে পারেন না সেদিন চাতাল মালিকরা তাদের কোন সহায়তা করেন না। চাতাল শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির জন্য চাতাল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে বলেনও জানা তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী এলাকায় চাতাল মালিক মোতালেব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা সত্য যে চাতাল শ্রমিকরা পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি পান না। কিন্তু, এখানে অনেক শ্রমিক চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন। হিসাব করলে প্রত্যেক চাতাল শ্রমিক দিন শেষে ৮০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

3h ago