সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: স্থানীয়দের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যে নমুনা সংগ্রহ

বিএম ডিপো পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বি এম কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ শুক্রবার অধিদপ্তরের মহামারি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে দলটি ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে।

তাদের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্ঘটনাস্থলে এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের শরীরে এ বিস্ফোরণ কী প্রভাব ফেলতে পারে তা মূল্যায়নের জন্য নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হবে।'

ডিপো এলাকা থেকে মাটি, পানি, ছাই, বিভিন্ন রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনার পর আশেপাশের লোকজনের স্বাস্থ্যের ওপর বিস্ফোরিত রাসায়নিকের প্রভাব কতটা পড়বে নমুনা পরীক্ষা করে তা দেখা হবে। এ বিস্ফোরণের ফলে জনসাধারণ দীর্ঘমেয়াদে শারীরিকভাবে ভুগবেন কি না, তাও তারা মূল্যায়ন করবেন।'

এ ধরনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ও আশেপাশের মানুষের শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান তিনি।

নমুনা পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি নির্দেশিকা তৈরি করবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'স্থানীয়দের মধ্যে যে ভীতি তৈরি হয়েছে তা দূর করতেও অধিদপ্তরের দলটি সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।'

কারো শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে শিগগির উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।

এছাড়াও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল আজ শুক্রবার বি এম ডিপো পরিদর্শন করে। 

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (সিআইডি) শাহনেওয়াজ খালেদের নেতৃত্বে দলটি ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে।

শাহনেওয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের কারণ জানতে তদন্তের স্বার্থে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।'

এদিকে বি এম কনটেইনার ডিপোর ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ চলছে। 

আজ শুক্রবার ক্রেনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে ডিপোতে থাকা কনটেইনারগুলো সরাতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।

বি এম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধ্বংসস্তূপ ও কনটেইনারগুলো অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে তারা এর মধ্যে কোনো মরদেহ আছে কি না তাও দেখছেন।'

তিনি বলেন, 'ডিপোতে ৪ হাজার ৩১৫টির মতো কনটেইনার আছে। এর মধ্যে কতগুলোতে আগুন লাগেনি। কিছু আংশিক ও কিছু সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ডিপোর কর্মীদের ৩টি ক্যাটাগরিতে সেগুলোকে রাখার নির্দেশ দিয়েছি।'

কতগুলো কনটেইনার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কতগুলো আংশিক এবং কতগুলো ভালো আছে, আগামীকালের মধ্যে তা জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনিও।

তিনি বলেন, 'আমরা আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছি এবং আগামী মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে দুর্ঘটনার পর আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হবে।'

এখনো চিকিৎসাধীন ৯৮ জন

কনটেইনার হেলপার আনোয়ার হোসেনের পা, কোমর ও চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

আনোয়ারের মামা আব্দুল মান্নান হাসপাতালে তার সঙ্গে আছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু আমি জানি না কী হবে, আমার ভাগ্নে সুস্থ হবে কি না, জানি না।'

আমিনুল ইসলাম (৩৩) সাত বছর ধরে বি এম ডিপোতে জুট ইয়ার্ডের কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর আহত হন।

দুর্ঘটনার পর তাকে প্রথমে বন্দর নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর তাকে চমেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

তার কোমরে ও হাতে পোড়ার আঘাত আছে।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ড বি এম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আনোয়ার ও আমিনুলের মতো মোট ৯৮ জন এখনো চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন।

এর মধ্যে ৫০ জনের বেশি চোখে আঘাত পেয়েছেন। আহতদের প্রায় সবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া আঘাতের চিহ্ন আছে। 

আহত মোট ২২ জনকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে চমেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার লিটন কুমার পালিত ডেইলি স্টারকে জানান, তার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল। তবে কেউই বিপদমুক্ত নন।

তিনি বলেন, 'একজন পোড়া রোগীকে হাসপাতাল থেকে না ছাড়া পর্যন্ত তাকে বিপদমুক্ত বলা যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations: Trump

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent

6m ago