পাচার করা অর্থ বৈধ দেখানোর সুযোগ প্রস্তাবের বিরোধিতা সংসদে

ফাইল ছবি

দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা।

রোববার জাতীয় সংসদে ২০২২–২০২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, 'যারা লুটপাট করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। অর্থমন্ত্রী এই করোনাকালীন সময়ে মানুষের জীবন রক্ষার যে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, সেখানে একদিকে মানুষকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। অপরদিকে, হাজার হাজার কোটি টাকা এই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে, সেটা রোধ করতে পারেননি।'

পাচার করা অর্থ কর দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগের প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'যারা অর্থ চুরি করলেন, অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে দিলেন, তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এটি সমর্থন যোগ্য নয়। তার (অর্থমন্ত্রী) উচিত ছিল যারা এই করোনাকালে অবৈধ টাকা অর্জন করে বিদেশে পাচার করেছে, এই টাকা যেন পাচার না হয়, সেটার প্রতিরোধ করা। কিন্তু সেখানে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'টাকা পাচার করে বাংলাদেশে বৈধভাবে টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলে, মানি লন্ডারিং আইন বাংলাদেশে দরকার নেই। মানুষ সন্দেহ করছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করার জন্য বসে আছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হবে। যারা অবৈধভাবে টাকা লুটপাট করে, সেগুলো বৈধ করার জন্য এটি নিয়ে আসছেন। এতে দায়মুক্তি দিলে মানুষ উৎসাহী হবে অবৈধভাবে টাকা উপার্জনে।'

'একদিকে মানুষ সৎ পথে আয় করতে যুদ্ধ করছে। অন্যদিকে লুটপাট করে যারা টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে তারা সামান্য কিছু কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনবেন। দেখা যাবে চোররা হয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠ করদাতা,' যোগ করেন তিনি।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি সংসদে বলেন, 'ব্যাংক ডাকাতি করে টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে কী হবে? ডাকাতির মামলা হবে না? দুর্নীতি করলে মামলা হবে না? যদি কারো বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকে, এ সময় তিনি যদি টাকা ফিরিয়ে আনেন তাহলে কি মামলা চলবে না?'

তিনি বলেন, 'এমন একটি বিধান রাখা উচিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই সুযোগটি নেওয়া যাবে না।'

সরকারি দলের সদস্য প্রাণগোপাল দত্ত বলেন, 'অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না। সমাজে এটার ইতিবাচক প্রভাব নেই। যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তারা যদি সৎ হতেন তাহলে টাকা দেশেই রাখতেন। চোর ধর্মের কথা শোনে না, এটা মাথায় রাখা উচিত।'

একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, 'এটি করা হলে একদিনে দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আর যদি দুর্নীতি না কমে তাহলে আমি সংসদ থেকে ইস্তফা দেবো।'

মোকাব্বির খান বলেন, 'দুর্নীতিবাজেরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে। মানুষের পকেট কেটেছে। ক্লার্ক, ড্রাইভারের মত ছোট ছোট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বড় পদে, হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে তাদের লোম স্পর্শ করার সাহস নেই।'

সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, 'দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি "এক্সপোর্টেড"। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটি হয়েছে।  মানুষের চাহিদা সীমিত না করে সহায়তা বাড়াতে হবে এবং মূদ্রানীতি সহজ করতে হবে।'

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মহিউদ্দীন খান আলমগীর আলোচনায় অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

50m ago