অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না লিটনের

শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার ফয়স লেক লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাশে বিজয়নগরে পাহাড় ধসে প্রাণ হারান লিটন। ছবি: সিফায়াত উল্লাহ

দেড় বছর আগে লিটনের সঙ্গে বিয়ে একই এলাকার শারমিনের। আগামী সেপ্টেম্বরে শারমিন ও লিটনের সন্তানের পৃথিবীতে আসার কথা। কিন্তু, তার আগেই লিটনের পরিবারে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।

শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার ফয়স লেক লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাশে বিজয়নগরে পাহাড় ধসে প্রাণ হারান ২ ভাই। তারমধ্যে একজন ২৪ বছর বয়সী লিটন। তিনি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। বিধ্বস্ত একটি ঘরের পাশে বসে আছেন লিটনের স্ত্রী শারমিন আকতার। অনাগত সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখার আগেই স্বামীর চিরবিদায়ে দিশেহারা শারমিন। স্বামীকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।

শারমিন বলেন, 'আমি গত সপ্তাহে বাবার বাড়িতে যাই। গতকাল রাতেও আমার স্বামী আমাকে দেখতে যায়। আজ আমাকে নিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে সব তছনছ হয়ে গেল।'

ভেঙে যাওয়া ঘরে পাশেই বসে ছিলেন শোকে কাতর লিটনের মা নুর জাহান বেগম। ২ ছেলেকে হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।

নুর জাহান বেগম বলেন, '১৭ বছর ধরে এই ঘরে থাকতেছি। কোনোদিন এমন ঘটনা ঘটেনি। আল্লাহ আমার ২ মানিককে নিয়ে গেল।'

জানা গেছে, পাহাড় নিচে তৈরি করা ঘরটির ছয়টি কক্ষে বসবাস করতো নুর জাহানের ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ে। মারা যাওয়া আরেক ছেলে ইমন স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। বড়ভাই লিটনের সঙ্গে সে একই কক্ষে ঘুমিয়েছিল।

নুর জাহান বেগম বলেন, 'কাল সারাদিন ভারী বৃষ্টি ছিল। আমাদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। এজন্য পরিবারের সবাই স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে অবস্থান নিই। ইমনকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল লিটন। সেখান থেকে ফিরে বাসায় ঘুমিয়ে পড়ে ২ ভাই।'

'তারা ঘরে আছে সেটি আমরা জানতাম না। রাত ৩টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এসে দেখি আমাদের ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়েছে। তারপর কক্ষে ঢুকে দেখি আমার ২ ছেলে মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। এরপর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে মাটি সরিয়ে আমার সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার করেম,' বলেন নুরজাহান বেগম।

প্রতিবেশীর একটি ঘরে বিলাপ করছিলেন লিটনের বড় ভাই সুজন। তিনি বলেন, 'বিপদ আমার ভাইদের ডেকে এনেছে। আমরা সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। কিন্তু, তারা কেন এখানে এলো?'

কেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন জানতে চাইলে সুজন বলেন, 'আমরা আগে ফয়স লেক এলাকায় বসবাস করতাম। সেখানে সমতল ছিল। আমাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে এখানে পুনর্বাসন করা হয়। আমরা ভিটেমাটি ছাড়া মানুষ। তাই মাথা গোঁজার একটি স্থান পেয়ে সেটিতে বসবাস করছি। আমাদের সমতলে পুনর্বাসন করা হলে সেখানে চলে যাব।'

এদিকে পাহাড় ধসের পর থেকে প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শনে এলেও কেউ তাদের সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ করেন সুজন।

অন্যদিকে, একই এলাকার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনাতেও পাহাড় ধসে ২ বোন নিহত হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Rampal fouling 2 Sundarbans rivers

The Rampal power plant began operation in late 2022 without an effluent treatment plant and has since been discharging untreated waste into the Pasur and Maidara rivers next to the Sundarbans.

4h ago