পানি বাড়ছে হাকালুকি হাওরে, প্লাবিত নতুন এলাকা

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

সিলেট-সুনামগঞ্জ গত ২ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এবার ভয়ঙ্কর হচ্ছে কুশিয়ারা নদী। সেই পানি প্রবেশ করছে হাকালুকি হাওরে। ফলে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার হাওর সংলগ্ন কয়েকটি উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারার পানি আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

কুশিয়ারার পানিতে সয়লাব হচ্ছে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা।

এ ছাড়াও, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভারত থেকে আসা আরও ৪ পাহাড়ি নদী—ফানাই, আনফানাই, কন্টিনালা ও জুড়ি দিয়ে উজানের ঢল নামছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে। ফলে হাওরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

অনেক উঁচু বসতিতেও বন্যার পানি উঠেছে। এরই মধ্যে সেসব এলাকায় হাটবাজার, রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া এলাকার সাজেদ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাকালুকি তীরবর্তী সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যটনকেন্দ্রও পানিতে তলিয়ে গেছে। ১৯৮৮ সালের পর এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জকিগঞ্জ উপজেলার ৩৯ স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছিল। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বানের পানিতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাকালুকি হাওরের পাশে অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা কমর উদ্দিন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুশিয়ারা ও সোনাই নদীর পানি সরাসরি হাওরে ঢুকছে। আমরা বিপদে আছি।'

বালাগঞ্জ উপজেলার পরিস্থিতি একই। কুশিয়ারার পানিতে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক বন্ধ।

গতকাল সারাদিন উপজেলার চারখাই, আলীনগর, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার ও থানাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল এলাকার আজির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল সোমবার বিকালে বৃষ্টি ছিল না অথচ পানি বাড়ছেই। বাড়ির ভিতর প্রথমে সামান্য পানি ছিল। এখন সেখানে হাঁটু পানি। পানিবন্দি আছি।'

কুলাউড়া পৌরসভার সিপন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাড়িঘর ও মালামালের মায়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। কুলাউড়া পৌরসভার প্রায় সব কয়েকটি ওয়ার্ডে মানুষ পানিবন্দি। আজ সকালে শুনলাম পৌরসভার কিছু উঁচু স্থানও ডুবে গেছে।'

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, কুলাউড়া উপজেলায় ৩৩ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ২২ আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ৭০০-র বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বৃষ্টি না থাকলেও হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh's exports stuck in EU, US orbit

Non-garment exports struggle with quality standards and logistics bottlenecks

14h ago