আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন সিলেটের ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ

ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

সিলেটে গত ২ দিনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩১ জন বন্যার্ত বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এর ফলে চালু থাকা আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও কমেছে ১৫টি।

সিলেট জেলা প্রশাসনের দেওয়া আজ বুধবারের এবং গত সোমবারের তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা যায়।

এ ছাড়া, সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকাতে গিয়েও দেখা গেছে, বন্যার পানি অনেকটা কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

এমন কয়েকটি পরিবারের দেখা মেলে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্নি এলাকায়। বন্যার পানি নামায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন তারা।

এদিকে প্রায় ১০ দিন পরে সিলেটে রোদের দেখা পেয়ে ঘরের জিনিসপত্র মহাসড়কের উপরেই শুকাতে দিয়েছেন অনেকে।

৭০ বছর বয়স্ক সাজিদ আলী বলেন, 'বন্যার পানি দ্রুত বাড়ায় ঘর থেকে জিনিসপত্র কিছুই বের করতে পারিনি। এখন লেপ-কাঁথাসহ যা আছে সব শুকাতে দিছি। ঘরও ঠিক করতে হবে এখন।'

একই অবস্থা একই গ্রামের রত্না রায়ের। তিনিও ঘরের ভিজে যাওয়া জিনিস শুকিয়ে নিচ্ছিলেন রোদে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কবির আহমেদ বলেন, '২ দিনে ২-৩ হাত পানি কমেছে। মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে উঠতে শুরু করায় অনেকেই ঘরে ফিরছেন। কিন্তু যাদের কাঁচা ঘর ছিল, তাদের প্রায় সবার ঘর ভেঙে গেছে বন্যার তোড়ে। পাকা দালান ছাড়া সব ধরনের ঘরই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

'সবার ঘরে যা ধান ছিল, সবই নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় কারো হাতেই টাকা নাই। সাধারণ মানুষের খাবার নেই, তারা ঘর কীভাবে মেরামত করবে?' প্রশ্ন তোলেন  এই ইউপি সদস্য, যিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ তারিখ পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে মোট ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন।

এরমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ২৩১ জন, বিশ্বনাথে ৬০ হাজার ৫৪৪ জন, সিলেট সিটি ২৬ হাজার ৯৭০ জন, সিলেট সদরে ২১ হাজার ৩৭৩ জন, গোয়াইনঘাটে ১৯ হাজার ৬৫০ জন, ওসমানীনগরে ৫ হাজার ৪৪ জন, দক্ষিণ সুরমায় ৪ হাজার ৯১৫ জন, জৈন্তাপুরে ৪ হাজার ৮৪ জন, গোলাপগঞ্জে ২ হাজার জন, কানাইঘাটে ১ হাজার ৯৬৫ জন, বালাগঞ্জে ১ হাজার ৯১৮ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ১ হাজার ৬০০ জন, বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ১২০ জন ও জকিগঞ্জ ৩৭০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।

আজ বুধবার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ জন মানুষ আছে। সে হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩১ জন।

বুধবারের হিসাব অনুযায়ী,  এখন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৪৩ হাজার ৭৬৫ জন, বিশ্বনাথে ১৬ হাজার ৬৯২ জন, সিলেট সিটিতে ১২ হাজার ৭ জন, সিলেট সদরে ১৫ হাজার ৫১ জন, গোয়াইনঘাটে ১৫ হাজার ৬৫০ জন, ওসমানীনগরে ৪ হাজার ৬৮০ জন, দক্ষিণ সুরমায় ৩ হাজার ৭৫৩ জন, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ৪৯৬ জন, গোলাপগঞ্জে ২ হাজার ৫২৬ জন, কানাইঘাটে ২ হাজার ৬৫ জন, বালাগঞ্জে ২ হাজার ৯৪৬ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ১ হাজার ৬৮০ জন, বিয়ানীবাজারে ৩ হাজার ১৯২ জন ও জকিগঞ্জ ১ হাজার ৩৫০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, বিশ্বনাথ, সিলেট সিটি, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, জৈন্তাপুর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র মানুষ বেড়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, 'প্রাথমিক অবস্থায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক এলাকার খোঁজখবরও নেওয়া যায়নি। এখন সব এলাকার প্রকৃত সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা ত্রাণ বিতরণে নজর দিচ্ছি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী, যেখানে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছেন, সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সবাই সহযোগিতা পাবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

2h ago