বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাতে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের চিন্তা

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ।

গতকাল সোমবার দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে, যা প্রায় ৫ মাসের আমদানির খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট। সাধারণত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভই যথেষ্ট বলে বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। কিন্তু চলমান এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, রিজার্ভে যেন ৮-৯ মাসের আমদানির খরচের সমপরিমাণ টাকা রাখা হয়।

আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে বাংলাদেশকে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসবে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এই ইউনিয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভুটান, ইরান, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাণিজ্যের লেনদেন করে থাকে।

যদিও বাংলাদেশ আমদানি কমিয়েছে, তারপরও বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি অর্ডারেও প্রভাব ফেলবে, যে দুটো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মূল দুই উৎস।

সার্বিক এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

যদিও তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন যে, 'এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা শুধু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে, আইএমএফ মহামারির সংকট মোকাবেলায় ১৯০টি সদস্য দেশের জন্য সংস্থার নিজস্ব মুদ্রার মজুদ থেকে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার সমমানের এসডিআর (স্পেশাল ড্রইং রাইটস) ঘোষণা করে। যার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু সরকার ওই সময় এসডিআর নেয়নি। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছিল, এমনিতেই মহামারির সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বড় অংকের বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া, তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও যথেষ্ট ভালো ছিল- ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

পরে ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়, যার ফলে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। সরকার আমদানি বিধিনিষেধসহ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার কমাতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এর মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মানও কমিয়েছে। এসব পদক্ষেপ রিজার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হলেও সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই মাসে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী মাসে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, ঋণের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনেকটা নির্ভর করছে আইএমএফের দেওয়া শর্তের ওপর।

আগেরবার যখন আইএমএফ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন সঙ্গে ৩৩টি শর্ত জুড়ে দিয়েছিল, যার সবগুলোর সঙ্গে সরকার সম্মত ছিল না বলে ওই কর্মকর্তা বলেন।

শর্তের মধ্যে ছিল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, করবিহীন অর্থকে বৈধ করার শর্তহীন সুযোগ বাতিল করা, বৈদেশিক মুদ্রা নীতি শিথিল করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানো।

ওই কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কতদিন চলবে, বা দেশের মুল্যস্ফীতি মোকাবেলা করতে কত টাকার দরকার হবে, সব বিবেচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

'সরকার ঋণ নিলে তার সুদের হার হবে ২ শতাংশের নিচে এবং পরিশোধের মেয়াদ হবে ১৪ বছর,' বলেন তিনি।

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

6h ago