বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন

ছবি: সংগৃহীত

আমার জীবনের অর্ধেক সময় কেটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশের যেমন সব কিছু ধারণ করে রেখেছি বুকের ভেতর, ঠিক তেমনি খুব গভীরভাবেই অস্ট্রেলিয়ার সব কিছুই আমার জানা। এর রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, ধুলো-বালি, আবহাওয়া, নাগরিকদের যাপিত জীবন, সরকার এবং বিরোধী দলের প্রতিযোগিতা দেখছি নিয়ত। সেই অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে যদি কেউ কোনো ভুল তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেন, তখন তা সংশোধন করে দেওয়া একজন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান যথার্থ।'

তিনি প্রসঙ্গক্রমে সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আজকে অস্ট্রেলিয়াতে লাখ লাখ পরিবারকে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য। সেখানে কোনো অঙ্গরাজ্যে ১০ ঘণ্টা, কোনো অঙ্গরাজ্যে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।' 

অস্ট্রেলিয়া থেকে সাড়ে ৭ হাজার মাইল দূরে বসে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী খবরটি পেলেন অথচ অস্ট্রেলিয়ার কোনো নাগরিকই সেটা জানতে পারলেন না! মন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। 

অস্ট্রেলিয়া একটি নাগরিক রাষ্ট্র। এখানে সব কিছুর আগে দেখা হয় নাগরিকের সুবিধা। একটি এলাকার ছোট একটি রাস্তার সামান্য একটু কাজ করতে গেলেও সড়ক ও পরিববহন বিভাগ থেকে ১ সপ্তাহ আগে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তার পাশের হেলে পড়া একটি গাছের ডাল কাটার আগেও স্থানীয় কাউন্সিল থেকে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এতে কারও আপত্তি আছে কি না! নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্বশীলতা ও সন্মানবোধের এমন হাজারো উদাহরণ দেওয়া যাবে। এখানে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো কিছু করার সুযোগ সরকারের নেই। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী কয়লা ও গ্যাসের দাম বাড়লেও তা অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারেনি। 

'এনার্জি অস্ট্রেলিয়া' জানিয়েছে, তারা ইল্লাওয়ারা হ্রদের তীরে টাল্লাওয়ারা পাওয়ার স্টেশনে গ্যাসের 'আঁটসাঁট অবস্থার' প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি উৎপাদন বাড়িয়েছে।

ফেডারেল এনার্জি মিনিস্টার ক্রিস বোয়েন গত বুধবার রাজ্য ও অঞ্চলের জ্বালানি মন্ত্রীদের একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। সম্পদমন্ত্রী ম্যাডেলিন কিং সিস্টেমে আরও গ্যাস পেতে উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

এনার্জি অস্ট্রেলিয়ার একজন মুখপাত্র এবিসি নিউজকে বলেছেন, গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুদ রয়েছে তা নিশ্চিত করতে সরবরাহকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।'

ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি মার্কেট (এনইএম) যারা চালায় সেই 'অস্ট্রেলিয়ান এনার্জি মার্কেট অপারেটর' (এইএমও)-এর মতে, লোডশেডিং ছাড়াও অপারেটর সিস্টেমটিকে স্থিতিশীল রাখতে পারে এমন অনেক উপায় রয়েছে।'

আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এখানের মূলধারার প্রধান সংবাদপত্রগুলো পড়ি, রেডিও শুনি এবং টিভি দেখি। 'অস্ট্রেলিয়ান এনার্জি মার্কেট অপারেটর' (এইএম) সবশেষ গত ১৩ জুন ২০২২ অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছিল। বেশ কিছু গ্যাস ও ডিজেল জেনারেটর কাজ করছিল না বলে এই সতর্কতা। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ার কোনো অঙ্গরাজ্যে ১০ ঘণ্টা, কোনো অঙ্গরাজ্যে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে, এমন তথ্য কোথাও নেই। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীই ভালো বলতে পারবেন, এই তথ্যটি তিনি কোথায় পেয়েছেন! 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English

UN says cross-border aid to Myanmar requires approval from both govts

The clarification followed Foreign Adviser Touhid Hossain's statement on Sunday that Bangladesh had agreed in principle to a UN proposal for a humanitarian corridor to Myanmar's Rakhine State

30m ago