পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই, বাড়তি খরচের ধাক্কায় আমন চাষি

বিঘা প্রতি বাড়তি খরচ হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকা
aman_1.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত বছরও আমন মৌসুমে বিপাকে পড়েছিলেন কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কৃষক। তারা ধরণা করছেন, বৃষ্টি হচ্ছে না বলে এবারও তাদের বিঘা প্রতি বাড়তি ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হবে।

কৃষক জানান, মে ও জুন বৃষ্টির দরকার ছিল না। তখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। যে কারণে ধান আর ভুট্টা শুকাতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল খেতের সবজি। জুলাই আমন চাষের মৌসুম, এখন বৃষ্টি দরকার কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ২০ দিনে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বৃষ্টি হয়নি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মিয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক আজগর আলী অপেক্ষা করছিলেন বৃষ্টির পরে জমিতে হাল চাষ করে আমন লাগাবেন কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। এ বছর ১৪ বিঘা জমিতে আমন চাষ করার প্রস্তুতি নেন তিনি। সে অনুপাতে আমনের বীজতলাও প্রস্তুত করেন। বীজতলায় চারা গাছগুলো লালচে হয়ে যাচ্ছিল। সময় মতো রোপন করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যেত জন্য ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করেন তিনি। এতে বিঘা প্রতি বাড়তি ১৫০০-২০০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে তাকে।

aman_2.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই গ্রামের কৃষক ভোলানাথ বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরও সেচের পানিতে আমন চাষ করতে হয়েছিল। তবে আগের বছরগুলোতে আমন চাষ করেছি বৃষ্টির পানিতে। ২০ দিন ধরে কোনো বৃষ্টি নেই। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আমন ধানের চাষ বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। এ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়াটা কৃষির জন্য অশুভ,' বলেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খেদাবাগ গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, 'আমনের চাষ আমাদের সবচেয়ে লাভজনক কিন্তু সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি।'

তিনি জানান, এ বছর নূর ইসলাম ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

aman_3.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের কৃষক বিবেক চন্দ্র দাস বলেন, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন নেই তখন বৃষ্টি হচ্ছে। যখন বৃষ্টির প্রয়োজন হয় তখন কোনো বৃষ্টি নেই। সময় মতো আমনের চারা জমিতে রোপন করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি না থাকায় বীজতলায় অনেক চারা নষ্টও হয়ে গেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি নেই; আমরা কৃষকরা এটা ভাবতেই পারছি না।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লালমনিরহাটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৮৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে। ২ জেলায় আমনের বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

aman_4.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কৃড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সবুর ডেইলি স্টারকে বলেন, জুলাই মাসের শুরু থেকে এ অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে না। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুল রহমান বলেন, যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই কৃষকদের সেচের পানি দিয়ে আমনের চারা রোপনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়াটা জলবায়ু পরিবর্তনের মন্দ প্রভাব। সময় মতো আমন চারা রোপন করা না গেলে নষ্ট হতে পারে। জুলাই মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহ আমন চাষের সঠিক সময়। তবে অনেক কৃষক আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পযর্ন্ত আমন চারা রোপন করেন।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago