২০৩০ সালে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫.১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে

ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণটি নিরাপদ সীমার মধ্যেই থাকছে। ফলে পরবর্তী উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশও অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, এ ধরনের সব আশঙ্কা দূর হয়েছে।

সরকারের মধ্যম মেয়াদি ঋণ পরিচালনার কৌশলের (এমটিডিএস) অংশ হিসেবে মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এই পূর্বাভাষটি তৈরি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সরকারের এই সংস্থাটি বিদেশি ঋণ পরিশোধ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করে থাকে।

চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের বিপরীতে ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে। গত বছর পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। পূর্বাভাষ মতে, পরিশোধের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকবে এবং ২০২৯-৩০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে।

এর পরের বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিশোধের পরিমাণ কমতে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০৩৪-৩৫ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার হবে।

একইভাবে দেশের বৈদেশিক ঋণ ও জিডিপির অনুপাতও কমতে থাকবে।

মার্চে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) টেকসই ঋণ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের ১৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে এই অনুপাত ২০৩১-৩২ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে আইএমএফ মন্তব্য করে, 'বৈদেশিক ও সার্বিক ঋণের বোঝার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিম্ন ঝুঁকিতে রয়েছে।'

সরকারের এমটিডিএসে বর্ণিত ৪টি কৌশলের মধ্যে একটি হচ্ছে বৈদেশিক অর্থায়ন বাড়ানো। এ মাসেই এমটিডিএস চূড়ান্ত হয়েছে।

এই কৌশলের অংশ হিসেবে দেশের সার্বিক অর্থায়ন চাহিদার ৩৬ শতাংশ হ্রাসকৃত সুদের হারে ঋণ নিয়ে মেটানো হবে।

সর্বশেষ এমটিডিএসে আন্তর্জাতিক বন্ড ইস্যু করার সম্ভাবনাকে নাকচ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার দেনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির পেছনে এ ধরনের বন্ডকে বড় কারণ হিসবে চিহ্নিত করা যায়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও জিডিপির অনুপাত এতই কম যে ঋণের মূল্য (সুদের হার) বাড়লেও এই বোঝা সহনীয় মাত্রার বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ন্যুনতম পর্যায়ের।'

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত বাহ্যিক বিষয়গুলো থেকে কিছুটা ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বেড়ে যেয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে পারে এবং চলতি অ্যাকাউন্টে ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে।

'এ ধরনের পরিস্থিতির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না', যোগ করেন জাহিদ হোসেন।

তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ২ মূল উৎস, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কোনো কারণে কমে গেলে অথবা আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।

ফলে সময়মত ঋণ পরিশোধ করা ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যা এড়াতে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সরকারকে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার উপদেশ দেন।

'আমাদেরকে সেসব প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে, যেগুলো অর্থনীতিতে দৃশ্যমান ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এগুলো উৎপাদন, রপ্তানি থেকে উপার্জন অথবা আমদানির খরচ বাঁচানোর জন্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অবদান থাকতে হবে এবং এর বাণিজ্যিক উপযোগিতাও থাকতে হবে', যোগ করেন জাহিদ।

বিদেশি তহবিলের ক্ষেত্রে সকল শর্ত দেশের পক্ষে থাকছে কী না, সেটার দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত বলে মনে করেন এই অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ।

(সংক্ষেপিত)

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

3h ago