পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঋণের মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধির আবেদন রেলওয়ের

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান গত মাসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে চীন সরকারের কাছে এ অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে, পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্প, ইআরডি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ,
ছবি: স্টার

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণের মেয়াদ ১ বছর বাড়াতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান গত মাসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে চীন সরকারের কাছে এ আবেদন করেছেন।

২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ইআরডি ও ঢাকার চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ঋণের মেয়াদ ২০২৪ সালের ১২ মে শেষ হওয়ার কথা।

কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ মে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তাই মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ইআরডিকে পাঠানো এক চিঠিতে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান জানান, এর কারণ ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব এবং ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তর। এছাড়া তুলারামপুর ও টিটিপাড়া পয়েন্টে লেভেল ক্রসিংয়ের পরিবর্তে রেলওয়ে আন্ডারপাস নির্মাণের মতো পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'তাই ঠিকাদারের অনুরোধ অনুযায়ী সব কাজ শেষে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ৮৫ শতাংশ শেয়ারসহ মোট খরচ পরিশোধে অতিরিক্ত ৪ মাস সময় লাগবে।'

সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা থেকে এই প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই টাকা ঋণের মেয়াদের মধ্যে ব্যয় করতে হবে।

বিগত বছরগুলোতে প্রকল্প সহায়তা থেকে ব্যয়ের হার বিবেচনায় দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগে আগামী ১০ মাসের মধ্যে ২ হাজার ৯ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্যতার সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৯১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রকল্প সহায়তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যয় হবে না।

তাই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণ প্রাপ্যতার মেয়াদ বাড়ানো না হলে, অবশিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না।

সে হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে ১ হাজার ৯১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে, এজন্য অনুমোদিত বাজেটে রিসোর্স নেই।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, 'আমরা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ঋণ প্রাপ্যতার সময়কাল অন্তত ১২ মাস বাড়ানোর অনুরোধ। যেন সব বিল সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা যায়।'

তিনি জানান, তারা জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা কাটিয়ে উঠেছেন। এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। তবে, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ এবং আর্থিক অর্জন ৭৫ শতাংশ।'

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, ঋণ প্রাপ্যতার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তারা ইতোমধ্যে চীনা দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, 'বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে চীনের এক্সিম ব্যাংককে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে যদি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী অগ্রগতি না হয়, তাহলে ঋণের মেয়াদ আরও বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।'

২০১৬ সালের ৩ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিল। এই মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার ব্যয় করছে ১০ হাজার ২৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং বাকি ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

Comments