শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকরা আ. লীগের সভায়

আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফলে কাছিপাড়া ইউনিয়নে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যোগ দেন শিক্ষকরা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কাছিপাড়া আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া ডিগ্রী কলেজে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। এমপির সফরসূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। মিলাদ মাহফিল ও মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।

কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালিশুরী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ও কালিশুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নেছার উদ্দিন সিকদার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান প্রমুখ।

অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আনারকলি মাধ্যমিক স্কুলে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে হারুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সভাপতি সাহেব (স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি) এমপি সাহেবের প্রোগ্রামে থাকতে বলেছেন। তাই ৪টা ক্লাসের পর সাড়ে ১২টার দিকে ছুটি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছি।'

আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া ডিগ্রী কলেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। ছবি: সংগৃহীত

এই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ২টার পর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।

সোয়া ১২টার দিকে পূর্ব কাছিপাড়া দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসাটি বন্ধ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার সুপার মো. শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে বলেন, 'পৌনে ১২টার দিকে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে সভায় গিয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তার তাকে যেতে বলেছেন।

কাছিপাড়া ইউনিয়নের ৩টি মাদ্রাসা ছাড়াও অন্যান্য সবগুলো স্কুল ও কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

সাড়ে ১২টার দিকে কাছিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নে ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এদিন বন্ধ না থাকলেও অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শহীদ জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র শীল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিও অনুষ্ঠানে ছিলাম। হিন্দুদের খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিল আমার ওপর।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আমরা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য। আওয়ামী লীগের নেতারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাদের কথা না শুনলে চাকরি থাকবে না। তাই ইচ্ছা না থাকলেও চাকরি বাঁচাতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে যেতে হয়।'

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তারের মোবাইলে কল করা হলেও তার দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাছিপাড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম আকন বলেন, 'কাউকে বাধ্য করা হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগেই দুপুর ২টার পর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।'

আজ তার কলেজে পাঠদান হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

মন্তব্যের জন্য এমপি আ স ম ফিরোজের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

3h ago