৪২ বিত্তবানের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের খাস জমি, তদন্তে নামছে দুদক
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অন্তরালে ৪২ বিত্তবানের নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮৪ একর খাস জমি বন্দোবস্ত কাণ্ডে শিগগির তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ সংক্রান্ত অনুমোদন পেতে পটুয়াখালী দুদক উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই এ ঘটনায় দুদকের একজন সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এরপর দুদক নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু করবে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ।
এর আগে, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মামলাটি তদন্তের জন্য পটুয়াখালী দুদক উপ-পরিচালকের কার্যালয়কে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পটুয়াখালী দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম।
দুদক পটুয়াখালী সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, 'খাস জমি বন্দোবস্ত কাণ্ডের মামলার কাগজপত্র আমরা থানা পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছি। এ সংক্রান্ত অনুমোদন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন প্রাপ্তির পর কলাপাড়া থানায় দায়েরকৃত মামলাটি ফাইনাল রিপোর্টে নথিজাত করে দুদকের একজন সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এরপর নতুন করে মামলার তদন্ত করবে দুদক।'
দুদক উপ-পরিচালক আরও বলেন, 'ভুয়া বন্দোবস্ত বাতিল করলেই সব শেষ হয়ে যায় না, অপরাধ তো সংঘটিত হয়েছে। ইউএনও কার্যালয়কে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য বলেছি। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা তদন্ত শুরু করবো। ইউএনওর স্বাক্ষর যাচাইয়ে সিআইডি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া, সাব-রেজিস্ট্রার কীসের ভিত্তিতে ৪২ ভুয়া নামে জমি রেজিস্ট্রি করলেন, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখবো।'
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১৯৫ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের প্রত্যেককে ২ শতাংশ করে খাস জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য কলাপাড়া ইউএনও কার্যালয় থেকে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হয়। আর রেজিস্ট্রির কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির মূল তালিকার ১৯৫ জনের নামের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে আরও ৪২ জন বিত্তবানের নাম যুক্ত করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠালে ৪২ জনের ভুয়া নামসহ সবার নামে খাস জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে ইউএনও বিষয়টি জানতে পেরে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের নামে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় এবং কর্তৃপক্ষ হুমায়ুন কবিরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
Comments